• Home
  • About us
    • Constitution
    • Theme Song
  • Photo Gallery
  • News
    • News
    • Press Relase
    • Press secretary
  • Organization
    • Central Commitee
      • Presidium member
      • Advisory council
      • Vice Chairman
      • Joint secretary
      • Organizational secretary
      • Divisional Secretary
      • Joint oraganizational secretary
      • Joint Divitional Secretary
      • Executive Member
    • Sub-Organization
  • Central Office
    • Central Office
    • Chairman Office
Chairman corner
  • Biograpy
  • Speech of the president
  • Article of president
  • Media conferences
  • 9 years achivement progress
  • Poem
  • Song
Main Menu
  • Home
  • News
  • Citizen chatter
  • Bangladesh constitution
  • Federal Government
  • National News Paper
  • Book of Ershad
  • Video
  • Contact us
Home Article of president

ভূমিকা : বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে এক গুর"ত্বপূর্ণ কৌশলগত স'ানে অবসি'ত। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনের মতো অবস'ানে রয়েছে বাংলাদেশ। এটা সত্য যে, বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র আয়তনের দেশ। কিন' জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম এবং বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে মানুষের মাথাপিছু আয় খুবই কম। দেশে শিক্ষিত, দক্ষ এবং অদক্ষ কর্মক্ষম জনশক্তির কর্মসংস'ানের সুযোগ শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখানে জনশক্তির বিরাট অংশ সম্পূর্ণ কৃষিনির্ভর এবং কৃষি খাতে কর্মসংস'ানের সুযোগ আর নেই। অপরদিকে বর্তমানে শিল্পখাতেও কর্মসংস'ানের কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনো দেশ সম্পূর্ণভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করে উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। কৃষির পাশাপাশি প্রয়োজন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন। সত্যি কথা বলতে কি- আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত শিল্পের উন্নয়ন তো দূরের কথা বরং ক্রমেই বিপর্যয় ঘটছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে অবাধে অবৈধভাবে শিল্পপণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করার ফলে দেশের প্রায় অর্ধেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে অথবা বন্ধ হবার পথে রয়েছে। এমন অবস'া ঘটছে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে। সরকার ক্রমাগতভাবে দাবি করে যা"েছ যে, প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। অথচ দেশের বিপর্যস- অর্থনীতির কারণে অধিকাংশ বহুজাতিক কোমপানি তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যা"েছ। বৈদেশিক এবং স'ানীয় উভয় পর্যায়ের বিনিয়োগ এখন ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে কর্মক্ষম মানুষের কর্মসংস'ানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া তো দূরের কথা- শিল্প বিপর্যয়ের কারণে শ্রমিক-কর্মচারীরা আরো বেকার হয়ে যা"েছ। দেশের মেধা কর্মের সন্ধানে বিদেশে চলে যা"েছ। উৎপাদনশীল খাতে শ্রম বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়ে বিপুলসংখ্যক জনশক্তি অনুৎপাদনশীল খাতে তাদের শ্রম বিনিয়োগ করতে বাধ্য হ"েছ। অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত বেকার যুবকদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে এসেছে। এ হতাশা থেকে সৃষ্টি হ"েছ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। হতাশাগ্রস- যুবকরা সমাজবিরোধী কার্যকলাপ- সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। দুর্নীতি এখন জাতীয় জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সত্তর এবং আশির দশকে অর্থনীতিবিদরা বলতেন- মোট উন্নয়ন এবং বাজেটের ৪০ ভাগ অপচয় হয় বাকি ৬০ ভাগ যথাযথভাবে উন্নয়ন কাজে ব্যয় হয়। কিন' এখন তারা বলছেন, সত্তর ও আশির দশকে উন্নয়ন বাজেটের অপচয় এবং যথাযথ ব্যবহারের ওই হার বর্তমানে উল্টে গেছে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপচয়ের হার ৬০ ভাগেরও ঊর্ধ্বে চলে যা"েছ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স তিন দশক পেরিয়ে গেছে। অনেক আশা নিয়ে এদেশের মানুষ মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। অজস্র প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের যে স্বপ্ন ছিলো দেশবাসীর, তা শুধু ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না। স্বপ্ন ছিলো- আমরা পাবো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি কিন' অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসেনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে আমরা এখন সবচেয়ে নাজুক অবস'ার মধ্যে বিরাজ করছি।
আশির দশকে আমি যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের এক যুগান-কারী ব্যবস'া প্রবর্তন করেছিলাম। সেটা ছিলো উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তন। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে উপজেলা ব্যবস'া প্রতিষ্ঠার ফলে গ্রামীণ জনজীবনে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির এক নবযুগের সূচনা হয়। উপজেলা ব্যবস'া প্রবর্তনের ফলে জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে পল্লী অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন শুর" হয়। এর ফলে স'ানীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসংস'ানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন' অত্যন- পরিতাপের বিষয় যে, পরবর্তী সময় এক অপরিণামদর্শী সিদ্ধানে-র মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়নের সেই উপজেলা ব্যবস'া বাতিল করে দেয়া হয়। গ্রামপ্রধান আমাদের এই দেশে সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে গ্রামের উন্নয়নের ওপর। কিন' উপজেলা পদ্ধতি বাতিল করার ফলে শুধু উন্নয়নই স'বির হয়ে পড়েনি এর পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি, সামাজিক অগ্রগতি, প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস'ার ক্ষেত্রেও ধস নেমে আসে। তখন প্রশাসন ও বিচার ব্যবস'াকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হয়েছিলো।
উপজেলা প্রবর্তনের মাধ্যমে একেবারে নিম্ন পর্যায়ে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মতো যুগান-কারী পদক্ষেপ এবং এ পদ্ধতির সুবিধাদি বাস-বতার আলোকে আমি ব্যাপকভিত্তিক প্রশাসনিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের কথা বিবেচনা করি। এটা হ"েছ ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ব্যবস'া প্রবর্তন। দেশের শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং উন্নয়ন সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাসহ সুচার" প্রশাসনিক ব্যবস'া প্রবর্তনের জন্য দেশকে ৮টি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। দেশের বর্তমান অপর ৬টি বিভাগকে প্রদেশে রূপান-র এবং রংপুর-দিনাজপুর নিয়ে একটি প্রদেশ এবং বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলা নিয়ে আরো একটি প্রদেশ গঠন করা যায়। ঢাকা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজধানী। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, প্রতিবেশী ভারতের রাজধানী দিল্লিকে এককভাবে একটি প্রদেশের মর্যাদা দেয়া হয়েছে এবং সেখানে পূর্ণাঙ্গ প্রাদেশিক সরকার বলবৎ আছে। কিন' বাংলাদেশের রাজধানী সে তুলনায় আয়তনে ছোট এবং লোকসংখ্যাও দিল্লির চেয়ে অনেক কম। সে বিবেচনায় ঢাকাকে শুধু কেন্দ্রীয় রাজধানী হিসেবেই বহাল রাখা যায়। সেক্ষেত্রে ঢাকার প্রাদেশিক রাজধানী বিভাগের একটি কেন্দ্রস'ল নির্ধারণ করে সেখানে স'ানান-র করা যায়। ভৌগোলিক অবস'ান এবং গুর"ত্ব অনুসারে ময়মনসিংহ ঢাকা প্রদেশের রাজধানী হতে পারে। অর্থাৎ দেশকে ৮টি প্রদেশে বিভক্ত করা হলে অঞ্চল হিসেবে পাওয়া যায়- ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম বিভাগ এবং রংপুর-দিনাজপুর ও নোয়াখালী-কুমিল্লা। প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের পক্ষে প্রাথমিক যৌক্তিকতা কী আছে তা দেখার জন্য আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার পদ্ধতিও অবলোকন করা যেতে পারে। বাংলাদেশসহ ৭টি দেশ নিয়ে যে সার্ক গঠিত হয়েছে তার মধ্যে ৪টি দেশেই প্রাদেশিক ব্যবস'া রয়েছে। ভারত,    পাকিস-ান, নেপাল ও শ্রীলংকায় প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তিত আছে। দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও একই শাসন ব্যবস'া বলবৎ রয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে সার্কের মধ্যে বাংলাদেশ হ"েছ দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৪ কোটি ৩৪ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে দেশের লোকসংখ্যা ২৬ কোটি ৫৪ লাখে উন্নীত হবে। সুতরাং অতীতের বাংলাদেশ নিয়ে চিন-া করে অগ্রসর হলে আগামী দিনে এ দেশবাসীকে অন্ধকারে নিপতিত হতে হবে। এক বিশাল জনসংখ্যার দেশকে কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যাবে সেই বিবেচনাতেই আমাদের শাসন পদ্ধতি রচনা করতে হবে। যেখানে আমাদের দেশের একটি বিভাগের জনসংখ্যার চেয়েও কম জনসংখ্যার দেশে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তিত রয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে এই পদ্ধতি প্রবর্তন করার আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধির আলোকে এখন আমাদের নতুন প্রশাসনিক ব্যবস'া প্রবর্তনের কথা চিন-া করতে হবে। সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস'া প্রবর্তন, দ্র"ত উন্নয়ন এবং নতুন শতকে অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দৃষ্টান- অনুসরণ করে বাংলাদেশকেও অগ্রসর হতে হবে।       বাস-বতার নিরিখে এটা সপষ্ট করেই বলা যায় যে, একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের জন্য আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে প্রস-াবিত প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'া প্রবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। এই ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে গোটা দেশে উন্নয়নের ভারসাম্যও নিশ্চিত হবে। এতে বেকার সমস্যা হ্রাস পাবে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিসি'তির উন্নতি হবে।
প্রস-াবিত কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো হবে নিম্নরূপ-  
ফেডারেল সরকার : প্রস-াবিত কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে আমি একটি প্রাথমিক ধারণা উপস'াপন করছি। এটি একটি কাঠামো মাত্র। এখানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। দেশে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তন করতে হলে সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন এবং উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য সংবিধানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের দেশে সংবিধান সংশোধন নতুন কোনো ঘটনা নয়। স্বাধীনতার পর এ পর্যন- মোট ১৪ বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে আবারও সংবিধানের সংশোধন করার প্রয়োজন দেখা দিলে আশা করি দলমত নির্বিশেষে সর্বসম্মতভাবে আমরা তা করতে পারবো। আমরা যদি সকল দল এ ব্যাপারে একমত হতে পারি- তাহলে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে এবং যেসব দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'া রয়েছে, তাদের কাঠামো অনুসরণ করে একটি সর্বসম্মত প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো গঠন করতে পারবো।
প্রস-াবিত দুই স-র বিশিষ্ট সরকার কাঠামোতে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হবে ফেডারেল সরকার। প্রেসিডেন্ট থাকবেন রাষ্ট্রের প্রধান এবং বর্তমান সংসদীয় সরকার ব্যবস'ায় প্রধানমন্ত্রী হবেন সরকার প্রধান। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের থাকবে ৩০০ আসনবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ। প্রধানমন্ত্রী হবেন মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। জাতীয় নির্বাচনে যে দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে সে দলই সরকার গঠন করবে। পদত্যাগ অথবা আস'া ভোটে পরাজিত না হলে সরকারের মেয়াদকাল হবে ৫ বছর। সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদ যথারীতি দেশের জন্য আইন প্রণয়ন এবং বার্ষিক বাজেট পাস করবে। সংবিধান অনুসারেই সংসদ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কেন্দ্রীয় সরকার আয়তনে ছোট হবে এবং জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিরক্ষা, অর্থ, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, শিক্ষা এবং জ্বালানির মতো জাতীয় বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর ন্যস- থাকবে। স'ানীয় প্রশাসন এবং উন্নয়নসহ অন্যান্য বিষয় বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে এবং প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস- থাকবে। যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কেন্দ্রীয় সরকার নৈতিক ও আর্থিকভাবে প্রাদেশিক সরকারকে সহযোগিতা করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত উন্নয়ন তহবিল থাকবে। স'ানীয় এবং বৈদেশিক উৎস থেকে এ তহবিল গঠিত হবে। প্রাদেশিক সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য ফেডারেল সরকার প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে গভর্নর নিয়োগ করবে। অবশ্য স'ানীয়ভাবে উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকারের যথাসম্ভব স্বায়ত্তশাসন থাকবে, যাতে প্রাদেশিক প্রশাসন স'ানীয়ভাবে উন্নয়ন ও প্রশাসনিক ব্যবস'া জোরদার করতে পারে। দেশের সার্বভৌমত্বের পরিপন'ী বড় ধরনের কোনো নিরাপত্তার হুমকি, আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান- বড় ধরনের অমান্যের মতো ব্যতিক্রম কোনো ঘটনার ক্ষেত্র ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারের কার্যকলাপের ওপর হস-ক্ষেপ করবে না।
ফেডারেল রাজধানী থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ঢাকা হবে বাংলাদেশের ফেডারেল রাজধানী। কেন্দ্রীয় রাজধানীকে কেন্দ্রীয় রাজধানী অঞ্চল ঘোষণা করা যেতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার একজন গভর্নরের তত্ত্বাবধানে এখানে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি প্রশাসন পরিচালনা করবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের রাজধানী দিল্লির উদাহরণ উল্লেখ করা যায়। কয়েক বছর আগে রাজ্যের মর্যাদায় উন্নীত করার আগে দিল্লি ছিলো কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ইউনিয়ন অঞ্চল। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগকৃত একজন গভর্নর কর্তৃক দিল্লির প্রশাসন পরিচালিত হতো। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরাকে অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে রাজধানী অঞ্চলের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় রাজধানীতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিজস্ব সচিবালয় অবসি'ত থাকবে। অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রণালয় ব্যতীত কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবালয়ের আয়তন ছোট হবে। সুপ্রিমকোর্ট অবশ্যই ফেডারেল রাজধানীতে অবসি'ত থাকবে।
প্রাদেশিক সরকার : প্রাদেশিক সরকার হবে কেন্দ্রীয় সরকারের ফেডারেটিং ইউনিট। সংশ্লিষ্ট প্রদেশের গভর্নর প্রাদেশিক সরকার নিয়োগ করবেন। প্রত্যেক প্রদেশের নিজস্ব প্রাদেশিক পরিষদ থাকবে। প্রত্যেক থানা ও উপজেলাকে প্রাদেশিক পরিষদের এক একটি আসন বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪৮০টি উপজেলা রয়েছে। থানা এবং উপজেলা মিলে এর সংখ্যা ৫০৮। অর্থাৎ সব থানাই উপজেলা নয়। যেমন রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে ২২টি থানা রয়েছে। ২২টি থানায় জাতীয় সংসদের সংসদীয় আসনের সংখ্যা ৮টি। সুতরাং রাজধানী ঢাকায় ৮টি সংসদীয় আসন থাকলে প্রাদেশিক আসন হবে ২২টি। এ ক্ষেত্রে প্রদেশের আয়তন অনুসারে প্রাদেশিক পরিষদের আসন সংখ্যা নির্ধারিত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকা প্রদেশে যদি ৯০টি থানা ও উপজেলা থাকে তাহলে প্রাদেশিক পরিষদের আসন সংখ্যা হবে ৯০টি। আবার সিলেট প্রদেশে যদি ৩৬টি উপজেলা ও থানা থাকে তাহলে এই প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদের আসন থাকবে ৩৬টি। যেমন ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্য হ"েছ সবচেয়ে বড় এবং সেখানে আসন সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে সিকিমের আয়তন সবচেয়ে ছোট এবং সেখানে প্রাদেশিক পরিষদে আসন সংখ্যাও সবচেয়ে কম। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পন'ায় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের বিজয়ী পার্টি বা কোয়ালিশন প্রাদেশিক সরকার গঠন করবে। প্রাদেশিক সরকারের প্রধান থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাদেশিক মন্ত্রিপরিষদের মুখ্যমন্ত্রী প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সাহায্য নিয়ে প্রদেশের প্রশাসন এবং অন্যান্য বিষয়াদি পরিচালনা করবেন। স'ানীয় প্রয়োজন অনুসারে আইন প্রণয়ন করার জন্য প্রাদেশিক পরিষদকে ক্ষমতা দেয়া হবে। এই আইন অবশ্যই সাংবিধানিক এবং কেন্দ্রীয় আইনকানুনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকতে হবে। আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা উভয় কক্ষের সম্মতিতে অথবা সুপ্রিমকোর্টের মাধ্যমে সমাধান করে নিতে হবে। প্রদেশের উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারকে যতোদূর সম্ভব ক্ষমতা এবং দায়িত্ব অর্পণ করবে। প্রদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা এবং পরিকল্পনার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারকে স্বাধীনতা ও ক্ষমতা প্রদান করা হবে। অবশ্য এ পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় পরিকল্পনার সাথে সমন্বিত হতে হবে এবং তা অবশ্যই জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার পরিপন'ী হতে পারবে না। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের যে কোনো অংশে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি       বাস-বায়ন করার অধিকার রাখবে।
জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট প্রদেশের প্রাদেশিক সরকারের অধীনে থাকবে। সরকারের বিদ্যমান সকল বিভাগ, উন্নয়ন সংস'া ও অন্যান্য সংস'াসমূহ বিভক্ত করা হবে এবং প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস- করা হবে। প্রদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রাদেশিক পুলিশ ব্যবস'া প্রবর্তন করা হবে। অবশ্য ক্যাডার কর্মকর্তা, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দায়িত্ব ফেডারেল সরকারের হাতে থাকবে। প্রাদেশিক সরকারের প্রয়োজন অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার এদের নিয়োগদান করবে। প্রত্যেক প্রদেশে হাইকোর্ট থাকবে। হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্টের অধীনে থাকবে। প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে যদি আলাদা করা হয় তাহলে বিচার ব্যবস'ার নিম্নকক্ষ হাইকোর্টের অধীনে থাকবে অথবা যদি বর্তমান অবস'া বলবৎ থাকে তাহলে তার প্রশাসন প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস- থাকবে। উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচির বাস-বায়ন জোরদার করার জন্য প্রাদেশিক সরকারের অধীনে প্রত্যেক জেলাকে উপজেলার সাথে উন্নয়ন ইউনিটে রূপান-রিত করা হবে। জেলা এবং উপজেলাকে সকল প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে- যাতে করে স'ানীয় জনগণকে ব্যাপক হারে কর্মসংস'ানের আওতায় আনা যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে প্রাদেশিক সরকারকে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং দাতাদের কাছ থেকে উন্নয়ন সহযোগিতা নেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হবে।
বর্তমান বিভাগীয় সদর দপ্তরকে প্রাদেশিক রাজধানী ঘোষণা করা হবে। এছাড়া বিভাগ বাদে যেখানে প্রদেশ গঠনের প্রস-াব করা হয়েছে- সেখানে সুবিধামত গুর"ত্বপূর্ণ স'ানে প্রাদেশিক রাজধানী করা হবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় সরকারের রাজধানী থাকবে বলে ঢাকা প্রদেশের রাজধানী এই প্রদেশের অপর গুর"ত্বপূর্ণ শহর ময়মনসিংহে করা যায়। প্রাদেশিক রাজধানীতে প্রাদেশিক সচিবালয় স'াপন করা হবে এবং সচিবালয়ের আয়তন সম্ভাব্য ছোট করা হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের মতো প্রাদেশিক সরকারের মেয়াদকাল হবে ৫ বছর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রাদেশিক নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। যদি ফেডারেল সরকার পদত্যাগ করে অথবা সংসদে ফেডারেল সরকার আস'া ভোটে হেরে যায় অথবা কোনো কারণে যদি কেন্দ্রীয় সরকার ৫ বছরের মেয়াদকাল অতিক্রম করতে না পারে তাহলে প্রাদেশিক সরকার বহাল থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকার কোনো কারণে মেয়াদকাল পূর্ণ করতে না পারলে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের মেয়াদকাল পরবর্তী ৫ বছর হতে পারবে না। অর্থাৎ ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হতে যে সময় বাকি থাকবে- মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর প্রতিষ্ঠিত সরকার সেই বাকি সময় ক্ষমতায় থাকবে। ৫ বছরের মেয়াদ শেষে একই সাথে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় সর্বময় ক্ষমতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতেই থাকবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় প্রাদেশিক সরকারের নির্বাহী কর্মকাণ্ড একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স'গিত রাখা যেতে পারে। যদি কোনো প্রাদেশিক সরকার পূর্ণ মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ সময়ের পরে পদত্যাগ করে অথবা কোনো কারণে যদি প্রাদেশিক সরকার মেয়াদকাল পূর্ণ করতে সক্ষম না হয় তাহলে উক্ত প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্ত করে সেখানে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সময় পর্যন- তা বলবৎ থাকবে। আর যদি কোনো প্রাদেশিক সরকার পূর্ণ মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ সময়ের আগে পদত্যাগ করে কিংবা কোনো কারণে প্রাদেশিক সরকারের পতন ঘটে, তাহলে প্রাদেশিক গভর্নরের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ওই প্রদেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকার মেয়াদের অবশিষ্ট সময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবে।
ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে সম্পর্ক : সকল প্রাদেশিক সরকার সময়ে সময়ে প্রবর্তিত নীতি ও আইন অনুযায়ী অথবা সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে ফেডারেল সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
প্রশাসন চালানো এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারকে যথাসম্ভব স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্যই প্রাদেশিক সরকারের কর্মকাণ্ড তদারক করবে। সংবিধান কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের কাজের পালা পরিধি নির্ধারণ করে দেবে (সে ক্ষেত্রে প্রস-াবিত প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তন করার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যেসব দেশে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া বলবৎ আছে- সেসব দেশের সংবিধান অনুসরণ করা যেতে পারে)।
জাতীয় ও প্রাদেশিক বাজেট, শুল্ক আদায়, প্রাদেশিক সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন তহবিল প্রদান, প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'ায় জাতীয় নিরাপত্তার ব্যবস'াদি, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিমণ্ডলে উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়াদি সম্পর্কে সংবিধানে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিলে সংবিধান  মোতাবেক সমাধান করতে হবে।
প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'ার সুবিধাদি : বাংলাদেশ মূলত প্রায় সমজাতীয় জাতিসত্তার জনঅধ্যুষিত দেশ। মোট জনসংখ্যার ৯৯ ভাগ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। জনসংখ্যার ৮৫ ভাগই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টানে-র দেশ। এখানে সংবিধান-প্রদত্ত বিধানের ফলস্বরূপ একই ভাষা ও ধর্মের বেশিরভাগ নাগরিক যে সুফল ভোগ করবে- বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের সংখ্যালঘু নাগরিকরাও সমানভাবে সেই সুফল ভোগ করবে। প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তন করা হলে কোনোভাবেই আঞ্চলিকতা সৃষ্টি হওয়া কিংবা বিভক্ত হয়ে যাওয়ার কোনো ধরনের আশংকা থাকবে না। বরং প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'ায় সারা দেশে সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এতে করে জাতীয়, প্রাদেশিক ও তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা দেশব্যাপী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জোরদার করতে পারবেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে স'ানীয়ভাবে কর্মসংস'ান সৃষ্টি হবে। স'ানীয় উন্নয়ন তদারকি করা কিংবা উন্নয়নের ক্ষেত্র বাছাই করার জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স'ানীয় সংসদ সদস্য, প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে উন্নয়ন উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ পদ্ধতি সরকারের সর্বস-রের কার্যকলাপের দায়-দায়িত্ব ও স্ব"ছতা নিশ্চিত করতে পারবে। যে দল অথবা দলসমূহের কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় থাকবে তারা পরবর্তী নির্বাচনে আবার বিজয়ী হবার জন্য তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কিংবা জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধির জন্য প্রদেশের উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জনের যথাসম্ভব চেষ্টা করে যাবে। এর ফলে স'ানীয় উন্নয়ন আরো জোরদার হবে, দুর্নীতি দূর হবে এবং উন্নয়ন তহবিলের অপচয় কমে আসবে। অবশ্য সরকারি কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ব্যবস'া প্রবর্তন করা হলে জনগণ খুব কাছে থেকে সরকারের কর্মকাণ্ড অবলোকন করতে পারবে। এতে করে প্রাদেশিক সরকারের দায়বদ্ধতা এবং স্ব"ছতা আরো জোরদার হবে। প্রাদেশিক রাজধানী হবে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, বিচার ব্যবস'া এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্র। এর ফলে জনগণ কেন্দ্রীয় রাজধানীর বদলে প্রাদেশিক রাজধানীর দিকে ঝুঁকে পড়বে এবং কেন্দ্রীয় রাজধানীতে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ কমে আসবে। প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে কেন্দ্রীয় রাজধানী বাদে দেশে আরো ৮টি গুর"ত্বপূর্ণ বড় শহর গড়ে উঠবে। এখানে কর্মসংস'ানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আমাদের দেশে নতুন শাসন ব্যবস'া বাস-বায়ন এমন কোনো কঠিন কাজ নয়। এখানে দল-মত নির্বিশেষে সকলের একান- আন-রিকতা ও ঐকমত্য সৃষ্টি হলে অল্প সময়ের ব্যবধানেই প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'া প্রবর্তন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রথম প্রয়োজন হয় সংবিধানের পরিবর্তন। এই সংবিধান পরিবর্তনের জন্যই সবার আগে প্রয়োজন সকল দলের ঐকমত্যে পৌঁছা। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। এ দেশে আমিই প্রথম প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছি বলে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে সকল কৃতিত্বই যে আমার অনুকূলে চলে আসবে- তা নয়। দেশ ও জাতি উপকৃত হবে সেটাই হবে বড় কথা।
প্রথমে আমি যখন এই প্রস-াবটি উল্লেখ করেছিলাম- তখন রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিসি'তির কথা বিবেচনা করে তিন পার্বত্য জেলাকে নিয়ে একটি প্রদেশ গঠনের কথা চিন-া করেছিলাম। কিন' এখন মনে করছি যে, প্রস-াবিত চট্টগ্রাম প্রদেশের ভৌগোলিক আয়তন সুবিধাজনক হয়নি। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে চট্টগ্রাম প্রদেশ এবং বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালী নিয়ে কুমিল্লা প্রদেশ গঠন করা হলে ভৌগোলিক দিক থেকে এই অঞ্চলের জনগণের জন্য সুবিধাজনক প্রদেশ গঠিত হতে পারে। আলোচনা-পর্যালোচনা করে এই ধরনের আরো পরিবর্তন-সংশোধন-সংযোজন আমরা করে নিতে পারি।
কোনো সংস্কার খুব সহজে বাস-বায়ন সম্ভব হয় না। আমি যখন মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করেছি কিংবা থানাকে উপজেলা করেছি, সেই সংস্কারও প্রথমে অনেকে সহজভাবে গ্রহণ করেননি। অর্থনৈতিক অবস'্‌া- পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন' দেশের মানুষ এখন তো সেই প্রশাসনিক সংস্কারকে যুগান-কারী বলে বর্ণনা করছেন। আমি মনে করি, প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনা-অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি-উন্নয়ন এবং শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুফল বয়ে আনবে। আমার প্রস-াবনার মধ্যে ত্র"টি-বিচ্যুতি বা ঘাটতি থাকতে পারে। আলোচনার মধ্য থেকেই আমরা তা সংশোধন করে নিতে পারবো বলে একান-ভাবে বিশ্বাস করি।
প্রসঙ্গ কথা :  ১৯৯৮ সালের কথা। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ব্যর্থতাও দেশবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলতে শুর" করেছে। জনগণ আন্দোলনমুখর হয়ে ওঠে। সে সময় আমি একটি বিষয় উপলব্ধি করলাম যে, সরকারের পর সরকার বদল হবে অথচ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না- এভাবে আর কতদিন চলবে। বোতলের পর বোতল পরিবর্তন হয় কিন' তার ভেতরের মদ যদি থেকেই যায় তাহলে সে পরিবর্তনে লাভ কী। সুতরাং রাষ্ট্র পরিচালনায় পদ্ধতির পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই উপলব্ধি থেকে ওই সময় এক জনসভায় বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের পরিকল্পনার কথা উত্থাপন করেছিলাম। আমার মনে হলো- মানুষ আমার প্রস-াবটিকে গ্রহণ করেছে। তারপর বিষয়টিকে নিয়ে আরো ভাবলাম। এই প্রস-াবের বিষয়টি    পত্র-পত্রিকায়ও ফলাও করে প্রচার হয়েছে। কোনো মহল থেকে আমার এই   প্রস-াবের বিপক্ষে কোনো বক্তব্য এলো না। শেষ পর্যন- ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের   প্রস-াবটিকে প্রধান অঙ্গীকার হিসেবে অন-র্ভুক্ত করা হয়। নির্বাচনে আমরা সরকারে যেতে না পারায় প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের দাবিটিকে পার্টির প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করি। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রাদেশিক ব্যবস'ার একটি প্রাথমিক কাঠামো আমি তৈরি করি। এই খসড়া কাঠামোটি একটি পুসি-কাকারে প্রকাশ করে দলীয় কর্মীদের মাঝে প্রচার করা হয়। এরপর ২০০৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর আমি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমার প্রশাসনিক সংস্কারমূলক প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের প্রস-াব উত্থাপন করি। এ প্রসঙ্গে অতীতের একটি ঘটনাও এখানে বলতে চাই। ক্ষমতায় থাকাকালে আমার একটি সংস্কার প্রস-াব ছিলো উপজেলা প্রবর্তন। সে সময় আমি প্রবল সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিন' প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের প্রস-াব উত্থাপনের পর কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সমালোচনার মুখে পড়িনি। আমার বিশ্বাস- দেশের সকল রাজনৈতিক দল প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করেছে। তবে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তন পরিকল্পনার ওপর ঢাকায় একটি সেমিনার অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিক নির্মল সেন এই প্রস-াবের কিছু সমালোচনা করে দৈনিক যুগান-রে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। আমি তার জবাবে একটি নিবন্ধ লিখেছি, যা দৈনিক যুগান-রেই প্রকাশিত হয়েছে।
ভূমিকা : বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে এক গুর"ত্বপূর্ণ কৌশলগত স'ানে অবসি'ত। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনের মতো অবস'ানে রয়েছে বাংলাদেশ। এটা সত্য যে, বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র আয়তনের দেশ। কিন' জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম এবং বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে মানুষের মাথাপিছু আয় খুবই কম। দেশে শিক্ষিত, দক্ষ এবং অদক্ষ কর্মক্ষম জনশক্তির কর্মসংস'ানের সুযোগ শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখানে জনশক্তির বিরাট অংশ সম্পূর্ণ কৃষিনির্ভর এবং কৃষি খাতে কর্মসংস'ানের সুযোগ আর নেই। অপরদিকে বর্তমানে শিল্পখাতেও কর্মসংস'ানের কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনো দেশ সম্পূর্ণভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করে উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। কৃষির পাশাপাশি প্রয়োজন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন। সত্যি কথা বলতে কি- আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত শিল্পের উন্নয়ন তো দূরের কথা বরং ক্রমেই বিপর্যয় ঘটছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে অবাধে অবৈধভাবে শিল্পপণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করার ফলে দেশের প্রায় অর্ধেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে অথবা বন্ধ হবার পথে রয়েছে। এমন অবস'া ঘটছে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে। সরকার ক্রমাগতভাবে দাবি করে যা"েছ যে, প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। অথচ দেশের বিপর্যস- অর্থনীতির কারণে অধিকাংশ বহুজাতিক কোমপানি তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যা"েছ। বৈদেশিক এবং স'ানীয় উভয় পর্যায়ের বিনিয়োগ এখন ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে কর্মক্ষম মানুষের কর্মসংস'ানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া তো দূরের কথা- শিল্প বিপর্যয়ের কারণে শ্রমিক-কর্মচারীরা আরো বেকার হয়ে যা"েছ। দেশের মেধা কর্মের সন্ধানে বিদেশে চলে যা"েছ। উৎপাদনশীল খাতে শ্রম বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়ে বিপুলসংখ্যক জনশক্তি অনুৎপাদনশীল খাতে তাদের শ্রম বিনিয়োগ করতে বাধ্য হ"েছ। অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত বেকার যুবকদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে এসেছে। এ হতাশা থেকে সৃষ্টি হ"েছ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। হতাশাগ্রস- যুবকরা সমাজবিরোধী কার্যকলাপ- সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। দুর্নীতি এখন জাতীয় জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সত্তর এবং আশির দশকে অর্থনীতিবিদরা বলতেন- মোট উন্নয়ন এবং বাজেটের ৪০ ভাগ অপচয় হয় বাকি ৬০ ভাগ যথাযথভাবে উন্নয়ন কাজে ব্যয় হয়। কিন' এখন তারা বলছেন, সত্তর ও আশির দশকে উন্নয়ন বাজেটের অপচয় এবং যথাযথ ব্যবহারের ওই হার বর্তমানে উল্টে গেছে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপচয়ের হার ৬০ ভাগেরও ঊর্ধ্বে চলে যা"েছ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স তিন দশক পেরিয়ে গেছে। অনেক আশা নিয়ে এদেশের মানুষ মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। অজস্র প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের যে স্বপ্ন ছিলো দেশবাসীর, তা শুধু ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না। স্বপ্ন ছিলো- আমরা পাবো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি কিন' অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসেনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে আমরা এখন সবচেয়ে নাজুক অবস'ার মধ্যে বিরাজ করছি।
আশির দশকে আমি যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের এক যুগান-কারী ব্যবস'া প্রবর্তন করেছিলাম। সেটা ছিলো উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তন। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে উপজেলা ব্যবস'া প্রতিষ্ঠার ফলে গ্রামীণ জনজীবনে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির এক নবযুগের সূচনা হয়। উপজেলা ব্যবস'া প্রবর্তনের ফলে জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে পল্লী অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন শুর" হয়। এর ফলে স'ানীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসংস'ানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন' অত্যন- পরিতাপের বিষয় যে, পরবর্তী সময় এক অপরিণামদর্শী সিদ্ধানে-র মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়নের সেই উপজেলা ব্যবস'া বাতিল করে দেয়া হয়। গ্রামপ্রধান আমাদের এই দেশে সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে গ্রামের উন্নয়নের ওপর। কিন' উপজেলা পদ্ধতি বাতিল করার ফলে শুধু উন্নয়নই স'বির হয়ে পড়েনি এর পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি, সামাজিক অগ্রগতি, প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস'ার ক্ষেত্রেও ধস নেমে আসে। তখন প্রশাসন ও বিচার ব্যবস'াকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হয়েছিলো।
উপজেলা প্রবর্তনের মাধ্যমে একেবারে নিম্ন পর্যায়ে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মতো যুগান-কারী পদক্ষেপ এবং এ পদ্ধতির সুবিধাদি বাস-বতার আলোকে আমি ব্যাপকভিত্তিক প্রশাসনিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের কথা বিবেচনা করি। এটা হ"েছ ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ব্যবস'া প্রবর্তন। দেশের শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং উন্নয়ন সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাসহ সুচার" প্রশাসনিক ব্যবস'া প্রবর্তনের জন্য দেশকে ৮টি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। দেশের বর্তমান অপর ৬টি বিভাগকে প্রদেশে রূপান-র এবং রংপুর-দিনাজপুর নিয়ে একটি প্রদেশ এবং বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলা নিয়ে আরো একটি প্রদেশ গঠন করা যায়। ঢাকা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজধানী। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, প্রতিবেশী ভারতের রাজধানী দিল্লিকে এককভাবে একটি প্রদেশের মর্যাদা দেয়া হয়েছে এবং সেখানে পূর্ণাঙ্গ প্রাদেশিক সরকার বলবৎ আছে। কিন' বাংলাদেশের রাজধানী সে তুলনায় আয়তনে ছোট এবং লোকসংখ্যাও দিল্লির চেয়ে অনেক কম। সে বিবেচনায় ঢাকাকে শুধু কেন্দ্রীয় রাজধানী হিসেবেই বহাল রাখা যায়। সেক্ষেত্রে ঢাকার প্রাদেশিক রাজধানী বিভাগের একটি কেন্দ্রস'ল নির্ধারণ করে সেখানে স'ানান-র করা যায়। ভৌগোলিক অবস'ান এবং গুর"ত্ব অনুসারে ময়মনসিংহ ঢাকা প্রদেশের রাজধানী হতে পারে। অর্থাৎ দেশকে ৮টি প্রদেশে বিভক্ত করা হলে অঞ্চল হিসেবে পাওয়া যায়- ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম বিভাগ এবং রংপুর-দিনাজপুর ও নোয়াখালী-কুমিল্লা। প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের পক্ষে প্রাথমিক যৌক্তিকতা কী আছে তা দেখার জন্য আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার পদ্ধতিও অবলোকন করা যেতে পারে। বাংলাদেশসহ ৭টি দেশ নিয়ে যে সার্ক গঠিত হয়েছে তার মধ্যে ৪টি দেশেই প্রাদেশিক ব্যবস'া রয়েছে। ভারত,    পাকিস-ান, নেপাল ও শ্রীলংকায় প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তিত আছে। দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও একই শাসন ব্যবস'া বলবৎ রয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে সার্কের মধ্যে বাংলাদেশ হ"েছ দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৪ কোটি ৩৪ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে দেশের লোকসংখ্যা ২৬ কোটি ৫৪ লাখে উন্নীত হবে। সুতরাং অতীতের বাংলাদেশ নিয়ে চিন-া করে অগ্রসর হলে আগামী দিনে এ দেশবাসীকে অন্ধকারে নিপতিত হতে হবে। এক বিশাল জনসংখ্যার দেশকে কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যাবে সেই বিবেচনাতেই আমাদের শাসন পদ্ধতি রচনা করতে হবে। যেখানে আমাদের দেশের একটি বিভাগের জনসংখ্যার চেয়েও কম জনসংখ্যার দেশে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তিত রয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে এই পদ্ধতি প্রবর্তন করার আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধির আলোকে এখন আমাদের নতুন প্রশাসনিক ব্যবস'া প্রবর্তনের কথা চিন-া করতে হবে। সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস'া প্রবর্তন, দ্র"ত উন্নয়ন এবং নতুন শতকে অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দৃষ্টান- অনুসরণ করে বাংলাদেশকেও অগ্রসর হতে হবে।       বাস-বতার নিরিখে এটা সপষ্ট করেই বলা যায় যে, একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের জন্য আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে প্রস-াবিত প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'া প্রবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। এই ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে গোটা দেশে উন্নয়নের ভারসাম্যও নিশ্চিত হবে। এতে বেকার সমস্যা হ্রাস পাবে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিসি'তির উন্নতি হবে।
প্রস-াবিত কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো হবে নিম্নরূপ-  
ফেডারেল সরকার : প্রস-াবিত কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে আমি একটি প্রাথমিক ধারণা উপস'াপন করছি। এটি একটি কাঠামো মাত্র। এখানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। দেশে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তন করতে হলে সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন এবং উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য সংবিধানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের দেশে সংবিধান সংশোধন নতুন কোনো ঘটনা নয়। স্বাধীনতার পর এ পর্যন- মোট ১৪ বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে আবারও সংবিধানের সংশোধন করার প্রয়োজন দেখা দিলে আশা করি দলমত নির্বিশেষে সর্বসম্মতভাবে আমরা তা করতে পারবো। আমরা যদি সকল দল এ ব্যাপারে একমত হতে পারি- তাহলে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে এবং যেসব দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'া রয়েছে, তাদের কাঠামো অনুসরণ করে একটি সর্বসম্মত প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো গঠন করতে পারবো।
প্রস-াবিত দুই স-র বিশিষ্ট সরকার কাঠামোতে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হবে ফেডারেল সরকার। প্রেসিডেন্ট থাকবেন রাষ্ট্রের প্রধান এবং বর্তমান সংসদীয় সরকার ব্যবস'ায় প্রধানমন্ত্রী হবেন সরকার প্রধান। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের থাকবে ৩০০ আসনবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ। প্রধানমন্ত্রী হবেন মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। জাতীয় নির্বাচনে যে দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে সে দলই সরকার গঠন করবে। পদত্যাগ অথবা আস'া ভোটে পরাজিত না হলে সরকারের মেয়াদকাল হবে ৫ বছর। সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদ যথারীতি দেশের জন্য আইন প্রণয়ন এবং বার্ষিক বাজেট পাস করবে। সংবিধান অনুসারেই সংসদ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কেন্দ্রীয় সরকার আয়তনে ছোট হবে এবং জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিরক্ষা, অর্থ, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, শিক্ষা এবং জ্বালানির মতো জাতীয় বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর ন্যস- থাকবে। স'ানীয় প্রশাসন এবং উন্নয়নসহ অন্যান্য বিষয় বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে এবং প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস- থাকবে। যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কেন্দ্রীয় সরকার নৈতিক ও আর্থিকভাবে প্রাদেশিক সরকারকে সহযোগিতা করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত উন্নয়ন তহবিল থাকবে। স'ানীয় এবং বৈদেশিক উৎস থেকে এ তহবিল গঠিত হবে। প্রাদেশিক সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য ফেডারেল সরকার প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে গভর্নর নিয়োগ করবে। অবশ্য স'ানীয়ভাবে উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকারের যথাসম্ভব স্বায়ত্তশাসন থাকবে, যাতে প্রাদেশিক প্রশাসন স'ানীয়ভাবে উন্নয়ন ও প্রশাসনিক ব্যবস'া জোরদার করতে পারে। দেশের সার্বভৌমত্বের পরিপন'ী বড় ধরনের কোনো নিরাপত্তার হুমকি, আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান- বড় ধরনের অমান্যের মতো ব্যতিক্রম কোনো ঘটনার ক্ষেত্র ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারের কার্যকলাপের ওপর হস-ক্ষেপ করবে না।
ফেডারেল রাজধানী থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ঢাকা হবে বাংলাদেশের ফেডারেল রাজধানী। কেন্দ্রীয় রাজধানীকে কেন্দ্রীয় রাজধানী অঞ্চল ঘোষণা করা যেতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার একজন গভর্নরের তত্ত্বাবধানে এখানে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি প্রশাসন পরিচালনা করবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের রাজধানী দিল্লির উদাহরণ উল্লেখ করা যায়। কয়েক বছর আগে রাজ্যের মর্যাদায় উন্নীত করার আগে দিল্লি ছিলো কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ইউনিয়ন অঞ্চল। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগকৃত একজন গভর্নর কর্তৃক দিল্লির প্রশাসন পরিচালিত হতো। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরাকে অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে রাজধানী অঞ্চলের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় রাজধানীতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিজস্ব সচিবালয় অবসি'ত থাকবে। অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রণালয় ব্যতীত কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবালয়ের আয়তন ছোট হবে। সুপ্রিমকোর্ট অবশ্যই ফেডারেল রাজধানীতে অবসি'ত থাকবে।
প্রাদেশিক সরকার : প্রাদেশিক সরকার হবে কেন্দ্রীয় সরকারের ফেডারেটিং ইউনিট। সংশ্লিষ্ট প্রদেশের গভর্নর প্রাদেশিক সরকার নিয়োগ করবেন। প্রত্যেক প্রদেশের নিজস্ব প্রাদেশিক পরিষদ থাকবে। প্রত্যেক থানা ও উপজেলাকে প্রাদেশিক পরিষদের এক একটি আসন বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪৮০টি উপজেলা রয়েছে। থানা এবং উপজেলা মিলে এর সংখ্যা ৫০৮। অর্থাৎ সব থানাই উপজেলা নয়। যেমন রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে ২২টি থানা রয়েছে। ২২টি থানায় জাতীয় সংসদের সংসদীয় আসনের সংখ্যা ৮টি। সুতরাং রাজধানী ঢাকায় ৮টি সংসদীয় আসন থাকলে প্রাদেশিক আসন হবে ২২টি। এ ক্ষেত্রে প্রদেশের আয়তন অনুসারে প্রাদেশিক পরিষদের আসন সংখ্যা নির্ধারিত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকা প্রদেশে যদি ৯০টি থানা ও উপজেলা থাকে তাহলে প্রাদেশিক পরিষদের আসন সংখ্যা হবে ৯০টি। আবার সিলেট প্রদেশে যদি ৩৬টি উপজেলা ও থানা থাকে তাহলে এই প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদের আসন থাকবে ৩৬টি। যেমন ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্য হ"েছ সবচেয়ে বড় এবং সেখানে আসন সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে সিকিমের আয়তন সবচেয়ে ছোট এবং সেখানে প্রাদেশিক পরিষদে আসন সংখ্যাও সবচেয়ে কম। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পন'ায় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের বিজয়ী পার্টি বা কোয়ালিশন প্রাদেশিক সরকার গঠন করবে। প্রাদেশিক সরকারের প্রধান থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাদেশিক মন্ত্রিপরিষদের মুখ্যমন্ত্রী প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সাহায্য নিয়ে প্রদেশের প্রশাসন এবং অন্যান্য বিষয়াদি পরিচালনা করবেন। স'ানীয় প্রয়োজন অনুসারে আইন প্রণয়ন করার জন্য প্রাদেশিক পরিষদকে ক্ষমতা দেয়া হবে। এই আইন অবশ্যই সাংবিধানিক এবং কেন্দ্রীয় আইনকানুনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকতে হবে। আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা উভয় কক্ষের সম্মতিতে অথবা সুপ্রিমকোর্টের মাধ্যমে সমাধান করে নিতে হবে। প্রদেশের উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারকে যতোদূর সম্ভব ক্ষমতা এবং দায়িত্ব অর্পণ করবে। প্রদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা এবং পরিকল্পনার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারকে স্বাধীনতা ও ক্ষমতা প্রদান করা হবে। অবশ্য এ পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় পরিকল্পনার সাথে সমন্বিত হতে হবে এবং তা অবশ্যই জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার পরিপন'ী হতে পারবে না। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের যে কোনো অংশে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি       বাস-বায়ন করার অধিকার রাখবে।
জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট প্রদেশের প্রাদেশিক সরকারের অধীনে থাকবে। সরকারের বিদ্যমান সকল বিভাগ, উন্নয়ন সংস'া ও অন্যান্য সংস'াসমূহ বিভক্ত করা হবে এবং প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস- করা হবে। প্রদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রাদেশিক পুলিশ ব্যবস'া প্রবর্তন করা হবে। অবশ্য ক্যাডার কর্মকর্তা, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দায়িত্ব ফেডারেল সরকারের হাতে থাকবে। প্রাদেশিক সরকারের প্রয়োজন অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার এদের নিয়োগদান করবে। প্রত্যেক প্রদেশে হাইকোর্ট থাকবে। হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্টের অধীনে থাকবে। প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে যদি আলাদা করা হয় তাহলে বিচার ব্যবস'ার নিম্নকক্ষ হাইকোর্টের অধীনে থাকবে অথবা যদি বর্তমান অবস'া বলবৎ থাকে তাহলে তার প্রশাসন প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস- থাকবে। উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচির বাস-বায়ন জোরদার করার জন্য প্রাদেশিক সরকারের অধীনে প্রত্যেক জেলাকে উপজেলার সাথে উন্নয়ন ইউনিটে রূপান-রিত করা হবে। জেলা এবং উপজেলাকে সকল প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে- যাতে করে স'ানীয় জনগণকে ব্যাপক হারে কর্মসংস'ানের আওতায় আনা যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে প্রাদেশিক সরকারকে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং দাতাদের কাছ থেকে উন্নয়ন সহযোগিতা নেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হবে।
বর্তমান বিভাগীয় সদর দপ্তরকে প্রাদেশিক রাজধানী ঘোষণা করা হবে। এছাড়া বিভাগ বাদে যেখানে প্রদেশ গঠনের প্রস-াব করা হয়েছে- সেখানে সুবিধামত গুর"ত্বপূর্ণ স'ানে প্রাদেশিক রাজধানী করা হবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় সরকারের রাজধানী থাকবে বলে ঢাকা প্রদেশের রাজধানী এই প্রদেশের অপর গুর"ত্বপূর্ণ শহর ময়মনসিংহে করা যায়। প্রাদেশিক রাজধানীতে প্রাদেশিক সচিবালয় স'াপন করা হবে এবং সচিবালয়ের আয়তন সম্ভাব্য ছোট করা হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের মতো প্রাদেশিক সরকারের মেয়াদকাল হবে ৫ বছর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রাদেশিক নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। যদি ফেডারেল সরকার পদত্যাগ করে অথবা সংসদে ফেডারেল সরকার আস'া ভোটে হেরে যায় অথবা কোনো কারণে যদি কেন্দ্রীয় সরকার ৫ বছরের মেয়াদকাল অতিক্রম করতে না পারে তাহলে প্রাদেশিক সরকার বহাল থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকার কোনো কারণে মেয়াদকাল পূর্ণ করতে না পারলে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের মেয়াদকাল পরবর্তী ৫ বছর হতে পারবে না। অর্থাৎ ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হতে যে সময় বাকি থাকবে- মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর প্রতিষ্ঠিত সরকার সেই বাকি সময় ক্ষমতায় থাকবে। ৫ বছরের মেয়াদ শেষে একই সাথে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় সর্বময় ক্ষমতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতেই থাকবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় প্রাদেশিক সরকারের নির্বাহী কর্মকাণ্ড একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স'গিত রাখা যেতে পারে। যদি কোনো প্রাদেশিক সরকার পূর্ণ মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ সময়ের পরে পদত্যাগ করে অথবা কোনো কারণে যদি প্রাদেশিক সরকার মেয়াদকাল পূর্ণ করতে সক্ষম না হয় তাহলে উক্ত প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্ত করে সেখানে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সময় পর্যন- তা বলবৎ থাকবে। আর যদি কোনো প্রাদেশিক সরকার পূর্ণ মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ সময়ের আগে পদত্যাগ করে কিংবা কোনো কারণে প্রাদেশিক সরকারের পতন ঘটে, তাহলে প্রাদেশিক গভর্নরের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ওই প্রদেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকার মেয়াদের অবশিষ্ট সময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবে।
ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে সম্পর্ক : সকল প্রাদেশিক সরকার সময়ে সময়ে প্রবর্তিত নীতি ও আইন অনুযায়ী অথবা সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে ফেডারেল সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
প্রশাসন চালানো এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারকে যথাসম্ভব স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্যই প্রাদেশিক সরকারের কর্মকাণ্ড তদারক করবে। সংবিধান কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের কাজের পালা পরিধি নির্ধারণ করে দেবে (সে ক্ষেত্রে প্রস-াবিত প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তন করার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যেসব দেশে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া বলবৎ আছে- সেসব দেশের সংবিধান অনুসরণ করা যেতে পারে)।
জাতীয় ও প্রাদেশিক বাজেট, শুল্ক আদায়, প্রাদেশিক সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন তহবিল প্রদান, প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'ায় জাতীয় নিরাপত্তার ব্যবস'াদি, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিমণ্ডলে উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়াদি সম্পর্কে সংবিধানে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিলে সংবিধান  মোতাবেক সমাধান করতে হবে।
প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'ার সুবিধাদি : বাংলাদেশ মূলত প্রায় সমজাতীয় জাতিসত্তার জনঅধ্যুষিত দেশ। মোট জনসংখ্যার ৯৯ ভাগ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। জনসংখ্যার ৮৫ ভাগই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টানে-র দেশ। এখানে সংবিধান-প্রদত্ত বিধানের ফলস্বরূপ একই ভাষা ও ধর্মের বেশিরভাগ নাগরিক যে সুফল ভোগ করবে- বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের সংখ্যালঘু নাগরিকরাও সমানভাবে সেই সুফল ভোগ করবে। প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তন করা হলে কোনোভাবেই আঞ্চলিকতা সৃষ্টি হওয়া কিংবা বিভক্ত হয়ে যাওয়ার কোনো ধরনের আশংকা থাকবে না। বরং প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'ায় সারা দেশে সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এতে করে জাতীয়, প্রাদেশিক ও তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা দেশব্যাপী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জোরদার করতে পারবেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে স'ানীয়ভাবে কর্মসংস'ান সৃষ্টি হবে। স'ানীয় উন্নয়ন তদারকি করা কিংবা উন্নয়নের ক্ষেত্র বাছাই করার জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স'ানীয় সংসদ সদস্য, প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে উন্নয়ন উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ পদ্ধতি সরকারের সর্বস-রের কার্যকলাপের দায়-দায়িত্ব ও স্ব"ছতা নিশ্চিত করতে পারবে। যে দল অথবা দলসমূহের কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় থাকবে তারা পরবর্তী নির্বাচনে আবার বিজয়ী হবার জন্য তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কিংবা জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধির জন্য প্রদেশের উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জনের যথাসম্ভব চেষ্টা করে যাবে। এর ফলে স'ানীয় উন্নয়ন আরো জোরদার হবে, দুর্নীতি দূর হবে এবং উন্নয়ন তহবিলের অপচয় কমে আসবে। অবশ্য সরকারি কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ব্যবস'া প্রবর্তন করা হলে জনগণ খুব কাছে থেকে সরকারের কর্মকাণ্ড অবলোকন করতে পারবে। এতে করে প্রাদেশিক সরকারের দায়বদ্ধতা এবং স্ব"ছতা আরো জোরদার হবে। প্রাদেশিক রাজধানী হবে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, বিচার ব্যবস'া এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্র। এর ফলে জনগণ কেন্দ্রীয় রাজধানীর বদলে প্রাদেশিক রাজধানীর দিকে ঝুঁকে পড়বে এবং কেন্দ্রীয় রাজধানীতে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ কমে আসবে। প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে কেন্দ্রীয় রাজধানী বাদে দেশে আরো ৮টি গুর"ত্বপূর্ণ বড় শহর গড়ে উঠবে। এখানে কর্মসংস'ানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আমাদের দেশে নতুন শাসন ব্যবস'া বাস-বায়ন এমন কোনো কঠিন কাজ নয়। এখানে দল-মত নির্বিশেষে সকলের একান- আন-রিকতা ও ঐকমত্য সৃষ্টি হলে অল্প সময়ের ব্যবধানেই প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'া প্রবর্তন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রথম প্রয়োজন হয় সংবিধানের পরিবর্তন। এই সংবিধান পরিবর্তনের জন্যই সবার আগে প্রয়োজন সকল দলের ঐকমত্যে পৌঁছা। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। এ দেশে আমিই প্রথম প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছি বলে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে সকল কৃতিত্বই যে আমার অনুকূলে চলে আসবে- তা নয়। দেশ ও জাতি উপকৃত হবে সেটাই হবে বড় কথা।
প্রথমে আমি যখন এই প্রস-াবটি উল্লেখ করেছিলাম- তখন রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিসি'তির কথা বিবেচনা করে তিন পার্বত্য জেলাকে নিয়ে একটি প্রদেশ গঠনের কথা চিন-া করেছিলাম। কিন' এখন মনে করছি যে, প্রস-াবিত চট্টগ্রাম প্রদেশের ভৌগোলিক আয়তন সুবিধাজনক হয়নি। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে চট্টগ্রাম প্রদেশ এবং বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালী নিয়ে কুমিল্লা প্রদেশ গঠন করা হলে ভৌগোলিক দিক থেকে এই অঞ্চলের জনগণের জন্য সুবিধাজনক প্রদেশ গঠিত হতে পারে। আলোচনা-পর্যালোচনা করে এই ধরনের আরো পরিবর্তন-সংশোধন-সংযোজন আমরা করে নিতে পারি।
কোনো সংস্কার খুব সহজে বাস-বায়ন সম্ভব হয় না। আমি যখন মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করেছি কিংবা থানাকে উপজেলা করেছি, সেই সংস্কারও প্রথমে অনেকে সহজভাবে গ্রহণ করেননি। অর্থনৈতিক অবস'্‌া- পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন' দেশের মানুষ এখন তো সেই প্রশাসনিক সংস্কারকে যুগান-কারী বলে বর্ণনা করছেন। আমি মনে করি, প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনা-অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি-উন্নয়ন এবং শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুফল বয়ে আনবে। আমার প্রস-াবনার মধ্যে ত্র"টি-বিচ্যুতি বা ঘাটতি থাকতে পারে। আলোচনার মধ্য থেকেই আমরা তা সংশোধন করে নিতে পারবো বলে একান-ভাবে বিশ্বাস করি।
প্রসঙ্গ কথা :  ১৯৯৮ সালের কথা। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ব্যর্থতাও দেশবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলতে শুর" করেছে। জনগণ আন্দোলনমুখর হয়ে ওঠে। সে সময় আমি একটি বিষয় উপলব্ধি করলাম যে, সরকারের পর সরকার বদল হবে অথচ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না- এভাবে আর কতদিন চলবে। বোতলের পর বোতল পরিবর্তন হয় কিন' তার ভেতরের মদ যদি থেকেই যায় তাহলে সে পরিবর্তনে লাভ কী। সুতরাং রাষ্ট্র পরিচালনায় পদ্ধতির পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই উপলব্ধি থেকে ওই সময় এক জনসভায় বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের পরিকল্পনার কথা উত্থাপন করেছিলাম। আমার মনে হলো- মানুষ আমার প্রস-াবটিকে গ্রহণ করেছে। তারপর বিষয়টিকে নিয়ে আরো ভাবলাম। এই প্রস-াবের বিষয়টি    পত্র-পত্রিকায়ও ফলাও করে প্রচার হয়েছে। কোনো মহল থেকে আমার এই   প্রস-াবের বিপক্ষে কোনো বক্তব্য এলো না। শেষ পর্যন- ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের   প্রস-াবটিকে প্রধান অঙ্গীকার হিসেবে অন-র্ভুক্ত করা হয়। নির্বাচনে আমরা সরকারে যেতে না পারায় প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের দাবিটিকে পার্টির প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করি। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রাদেশিক ব্যবস'ার একটি প্রাথমিক কাঠামো আমি তৈরি করি। এই খসড়া কাঠামোটি একটি পুসি-কাকারে প্রকাশ করে দলীয় কর্মীদের মাঝে প্রচার করা হয়। এরপর ২০০৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর আমি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমার প্রশাসনিক সংস্কারমূলক প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের প্রস-াব উত্থাপন করি। এ প্রসঙ্গে অতীতের একটি ঘটনাও এখানে বলতে চাই। ক্ষমতায় থাকাকালে আমার একটি সংস্কার প্রস-াব ছিলো উপজেলা প্রবর্তন। সে সময় আমি প্রবল সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিন' প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের প্রস-াব উত্থাপনের পর কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সমালোচনার মুখে পড়িনি। আমার বিশ্বাস- দেশের সকল রাজনৈতিক দল প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করেছে। তবে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তন পরিকল্পনার ওপর ঢাকায় একটি সেমিনার অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিক নির্মল সেন এই প্রস-াবের কিছু সমালোচনা করে দৈনিক যুগান-রে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। আমি তার জবাবে একটি নিবন্ধ লিখেছি, যা দৈনিক যুগান-রেই প্রকাশিত হয়েছে।
ভূমিকা : বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে এক গুর"ত্বপূর্ণ কৌশলগত স'ানে অবসি'ত। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনের মতো অবস'ানে রয়েছে বাংলাদেশ। এটা সত্য যে, বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র আয়তনের দেশ। কিন' জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম এবং বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে মানুষের মাথাপিছু আয় খুবই কম। দেশে শিক্ষিত, দক্ষ এবং অদক্ষ কর্মক্ষম জনশক্তির কর্মসংস'ানের সুযোগ শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখানে জনশক্তির বিরাট অংশ সম্পূর্ণ কৃষিনির্ভর এবং কৃষি খাতে কর্মসংস'ানের সুযোগ আর নেই। অপরদিকে বর্তমানে শিল্পখাতেও কর্মসংস'ানের কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনো দেশ সম্পূর্ণভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করে উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। কৃষির পাশাপাশি প্রয়োজন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন। সত্যি কথা বলতে কি- আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত শিল্পের উন্নয়ন তো দূরের কথা বরং ক্রমেই বিপর্যয় ঘটছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে অবাধে অবৈধভাবে শিল্পপণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করার ফলে দেশের প্রায় অর্ধেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে অথবা বন্ধ হবার পথে রয়েছে। এমন অবস'া ঘটছে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে। সরকার ক্রমাগতভাবে দাবি করে যা"েছ যে, প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। অথচ দেশের বিপর্যস- অর্থনীতির কারণে অধিকাংশ বহুজাতিক কোমপানি তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যা"েছ। বৈদেশিক এবং স'ানীয় উভয় পর্যায়ের বিনিয়োগ এখন ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে কর্মক্ষম মানুষের কর্মসংস'ানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া তো দূরের কথা- শিল্প বিপর্যয়ের কারণে শ্রমিক-কর্মচারীরা আরো বেকার হয়ে যা"েছ। দেশের মেধা কর্মের সন্ধানে বিদেশে চলে যা"েছ। উৎপাদনশীল খাতে শ্রম বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়ে বিপুলসংখ্যক জনশক্তি অনুৎপাদনশীল খাতে তাদের শ্রম বিনিয়োগ করতে বাধ্য হ"েছ। অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত বেকার যুবকদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে এসেছে। এ হতাশা থেকে সৃষ্টি হ"েছ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। হতাশাগ্রস- যুবকরা সমাজবিরোধী কার্যকলাপ- সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। দুর্নীতি এখন জাতীয় জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সত্তর এবং আশির দশকে অর্থনীতিবিদরা বলতেন- মোট উন্নয়ন এবং বাজেটের ৪০ ভাগ অপচয় হয় বাকি ৬০ ভাগ যথাযথভাবে উন্নয়ন কাজে ব্যয় হয়। কিন' এখন তারা বলছেন, সত্তর ও আশির দশকে উন্নয়ন বাজেটের অপচয় এবং যথাযথ ব্যবহারের ওই হার বর্তমানে উল্টে গেছে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপচয়ের হার ৬০ ভাগেরও ঊর্ধ্বে চলে যা"েছ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স তিন দশক পেরিয়ে গেছে। অনেক আশা নিয়ে এদেশের মানুষ মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। অজস্র প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের যে স্বপ্ন ছিলো দেশবাসীর, তা শুধু ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না। স্বপ্ন ছিলো- আমরা পাবো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি কিন' অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসেনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে আমরা এখন সবচেয়ে নাজুক অবস'ার মধ্যে বিরাজ করছি।
আশির দশকে আমি যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের এক যুগান-কারী ব্যবস'া প্রবর্তন করেছিলাম। সেটা ছিলো উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তন। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে উপজেলা ব্যবস'া প্রতিষ্ঠার ফলে গ্রামীণ জনজীবনে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির এক নবযুগের সূচনা হয়। উপজেলা ব্যবস'া প্রবর্তনের ফলে জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে পল্লী অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন শুর" হয়। এর ফলে স'ানীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসংস'ানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন' অত্যন- পরিতাপের বিষয় যে, পরবর্তী সময় এক অপরিণামদর্শী সিদ্ধানে-র মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়নের সেই উপজেলা ব্যবস'া বাতিল করে দেয়া হয়। গ্রামপ্রধান আমাদের এই দেশে সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে গ্রামের উন্নয়নের ওপর। কিন' উপজেলা পদ্ধতি বাতিল করার ফলে শুধু উন্নয়নই স'বির হয়ে পড়েনি এর পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি, সামাজিক অগ্রগতি, প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস'ার ক্ষেত্রেও ধস নেমে আসে। তখন প্রশাসন ও বিচার ব্যবস'াকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হয়েছিলো।
উপজেলা প্রবর্তনের মাধ্যমে একেবারে নিম্ন পর্যায়ে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মতো যুগান-কারী পদক্ষেপ এবং এ পদ্ধতির সুবিধাদি বাস-বতার আলোকে আমি ব্যাপকভিত্তিক প্রশাসনিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের কথা বিবেচনা করি। এটা হ"েছ ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ব্যবস'া প্রবর্তন। দেশের শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং উন্নয়ন সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাসহ সুচার" প্রশাসনিক ব্যবস'া প্রবর্তনের জন্য দেশকে ৮টি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। দেশের বর্তমান অপর ৬টি বিভাগকে প্রদেশে রূপান-র এবং রংপুর-দিনাজপুর নিয়ে একটি প্রদেশ এবং বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলা নিয়ে আরো একটি প্রদেশ গঠন করা যায়। ঢাকা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজধানী। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, প্রতিবেশী ভারতের রাজধানী দিল্লিকে এককভাবে একটি প্রদেশের মর্যাদা দেয়া হয়েছে এবং সেখানে পূর্ণাঙ্গ প্রাদেশিক সরকার বলবৎ আছে। কিন' বাংলাদেশের রাজধানী সে তুলনায় আয়তনে ছোট এবং লোকসংখ্যাও দিল্লির চেয়ে অনেক কম। সে বিবেচনায় ঢাকাকে শুধু কেন্দ্রীয় রাজধানী হিসেবেই বহাল রাখা যায়। সেক্ষেত্রে ঢাকার প্রাদেশিক রাজধানী বিভাগের একটি কেন্দ্রস'ল নির্ধারণ করে সেখানে স'ানান-র করা যায়। ভৌগোলিক অবস'ান এবং গুর"ত্ব অনুসারে ময়মনসিংহ ঢাকা প্রদেশের রাজধানী হতে পারে। অর্থাৎ দেশকে ৮টি প্রদেশে বিভক্ত করা হলে অঞ্চল হিসেবে পাওয়া যায়- ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম বিভাগ এবং রংপুর-দিনাজপুর ও নোয়াখালী-কুমিল্লা। প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের পক্ষে প্রাথমিক যৌক্তিকতা কী আছে তা দেখার জন্য আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার পদ্ধতিও অবলোকন করা যেতে পারে। বাংলাদেশসহ ৭টি দেশ নিয়ে যে সার্ক গঠিত হয়েছে তার মধ্যে ৪টি দেশেই প্রাদেশিক ব্যবস'া রয়েছে। ভারত,    পাকিস-ান, নেপাল ও শ্রীলংকায় প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তিত আছে। দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও একই শাসন ব্যবস'া বলবৎ রয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে সার্কের মধ্যে বাংলাদেশ হ"েছ দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৪ কোটি ৩৪ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে দেশের লোকসংখ্যা ২৬ কোটি ৫৪ লাখে উন্নীত হবে। সুতরাং অতীতের বাংলাদেশ নিয়ে চিন-া করে অগ্রসর হলে আগামী দিনে এ দেশবাসীকে অন্ধকারে নিপতিত হতে হবে। এক বিশাল জনসংখ্যার দেশকে কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যাবে সেই বিবেচনাতেই আমাদের শাসন পদ্ধতি রচনা করতে হবে। যেখানে আমাদের দেশের একটি বিভাগের জনসংখ্যার চেয়েও কম জনসংখ্যার দেশে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তিত রয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে এই পদ্ধতি প্রবর্তন করার আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধির আলোকে এখন আমাদের নতুন প্রশাসনিক ব্যবস'া প্রবর্তনের কথা চিন-া করতে হবে। সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস'া প্রবর্তন, দ্র"ত উন্নয়ন এবং নতুন শতকে অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দৃষ্টান- অনুসরণ করে বাংলাদেশকেও অগ্রসর হতে হবে।       বাস-বতার নিরিখে এটা সপষ্ট করেই বলা যায় যে, একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের জন্য আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে প্রস-াবিত প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'া প্রবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। এই ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে গোটা দেশে উন্নয়নের ভারসাম্যও নিশ্চিত হবে। এতে বেকার সমস্যা হ্রাস পাবে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিসি'তির উন্নতি হবে।
প্রস-াবিত কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো হবে নিম্নরূপ-  
ফেডারেল সরকার : প্রস-াবিত কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে আমি একটি প্রাথমিক ধারণা উপস'াপন করছি। এটি একটি কাঠামো মাত্র। এখানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। দেশে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তন করতে হলে সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন এবং উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য সংবিধানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের দেশে সংবিধান সংশোধন নতুন কোনো ঘটনা নয়। স্বাধীনতার পর এ পর্যন- মোট ১৪ বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে আবারও সংবিধানের সংশোধন করার প্রয়োজন দেখা দিলে আশা করি দলমত নির্বিশেষে সর্বসম্মতভাবে আমরা তা করতে পারবো। আমরা যদি সকল দল এ ব্যাপারে একমত হতে পারি- তাহলে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে এবং যেসব দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'া রয়েছে, তাদের কাঠামো অনুসরণ করে একটি সর্বসম্মত প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো গঠন করতে পারবো।
প্রস-াবিত দুই স-র বিশিষ্ট সরকার কাঠামোতে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হবে ফেডারেল সরকার। প্রেসিডেন্ট থাকবেন রাষ্ট্রের প্রধান এবং বর্তমান সংসদীয় সরকার ব্যবস'ায় প্রধানমন্ত্রী হবেন সরকার প্রধান। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের থাকবে ৩০০ আসনবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ। প্রধানমন্ত্রী হবেন মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। জাতীয় নির্বাচনে যে দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে সে দলই সরকার গঠন করবে। পদত্যাগ অথবা আস'া ভোটে পরাজিত না হলে সরকারের মেয়াদকাল হবে ৫ বছর। সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদ যথারীতি দেশের জন্য আইন প্রণয়ন এবং বার্ষিক বাজেট পাস করবে। সংবিধান অনুসারেই সংসদ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কেন্দ্রীয় সরকার আয়তনে ছোট হবে এবং জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিরক্ষা, অর্থ, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, শিক্ষা এবং জ্বালানির মতো জাতীয় বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর ন্যস- থাকবে। স'ানীয় প্রশাসন এবং উন্নয়নসহ অন্যান্য বিষয় বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে এবং প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস- থাকবে। যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কেন্দ্রীয় সরকার নৈতিক ও আর্থিকভাবে প্রাদেশিক সরকারকে সহযোগিতা করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত উন্নয়ন তহবিল থাকবে। স'ানীয় এবং বৈদেশিক উৎস থেকে এ তহবিল গঠিত হবে। প্রাদেশিক সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য ফেডারেল সরকার প্রত্যেক প্রদেশে একজন করে গভর্নর নিয়োগ করবে। অবশ্য স'ানীয়ভাবে উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকারের যথাসম্ভব স্বায়ত্তশাসন থাকবে, যাতে প্রাদেশিক প্রশাসন স'ানীয়ভাবে উন্নয়ন ও প্রশাসনিক ব্যবস'া জোরদার করতে পারে। দেশের সার্বভৌমত্বের পরিপন'ী বড় ধরনের কোনো নিরাপত্তার হুমকি, আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান- বড় ধরনের অমান্যের মতো ব্যতিক্রম কোনো ঘটনার ক্ষেত্র ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারের কার্যকলাপের ওপর হস-ক্ষেপ করবে না।
ফেডারেল রাজধানী থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ঢাকা হবে বাংলাদেশের ফেডারেল রাজধানী। কেন্দ্রীয় রাজধানীকে কেন্দ্রীয় রাজধানী অঞ্চল ঘোষণা করা যেতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার একজন গভর্নরের তত্ত্বাবধানে এখানে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি প্রশাসন পরিচালনা করবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের রাজধানী দিল্লির উদাহরণ উল্লেখ করা যায়। কয়েক বছর আগে রাজ্যের মর্যাদায় উন্নীত করার আগে দিল্লি ছিলো কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ইউনিয়ন অঞ্চল। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগকৃত একজন গভর্নর কর্তৃক দিল্লির প্রশাসন পরিচালিত হতো। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরাকে অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানে রাজধানী অঞ্চলের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় রাজধানীতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিজস্ব সচিবালয় অবসি'ত থাকবে। অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রণালয় ব্যতীত কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবালয়ের আয়তন ছোট হবে। সুপ্রিমকোর্ট অবশ্যই ফেডারেল রাজধানীতে অবসি'ত থাকবে।
প্রাদেশিক সরকার : প্রাদেশিক সরকার হবে কেন্দ্রীয় সরকারের ফেডারেটিং ইউনিট। সংশ্লিষ্ট প্রদেশের গভর্নর প্রাদেশিক সরকার নিয়োগ করবেন। প্রত্যেক প্রদেশের নিজস্ব প্রাদেশিক পরিষদ থাকবে। প্রত্যেক থানা ও উপজেলাকে প্রাদেশিক পরিষদের এক একটি আসন বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪৮০টি উপজেলা রয়েছে। থানা এবং উপজেলা মিলে এর সংখ্যা ৫০৮। অর্থাৎ সব থানাই উপজেলা নয়। যেমন রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে ২২টি থানা রয়েছে। ২২টি থানায় জাতীয় সংসদের সংসদীয় আসনের সংখ্যা ৮টি। সুতরাং রাজধানী ঢাকায় ৮টি সংসদীয় আসন থাকলে প্রাদেশিক আসন হবে ২২টি। এ ক্ষেত্রে প্রদেশের আয়তন অনুসারে প্রাদেশিক পরিষদের আসন সংখ্যা নির্ধারিত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকা প্রদেশে যদি ৯০টি থানা ও উপজেলা থাকে তাহলে প্রাদেশিক পরিষদের আসন সংখ্যা হবে ৯০টি। আবার সিলেট প্রদেশে যদি ৩৬টি উপজেলা ও থানা থাকে তাহলে এই প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদের আসন থাকবে ৩৬টি। যেমন ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্য হ"েছ সবচেয়ে বড় এবং সেখানে আসন সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে সিকিমের আয়তন সবচেয়ে ছোট এবং সেখানে প্রাদেশিক পরিষদে আসন সংখ্যাও সবচেয়ে কম। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পন'ায় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের বিজয়ী পার্টি বা কোয়ালিশন প্রাদেশিক সরকার গঠন করবে। প্রাদেশিক সরকারের প্রধান থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাদেশিক মন্ত্রিপরিষদের মুখ্যমন্ত্রী প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সাহায্য নিয়ে প্রদেশের প্রশাসন এবং অন্যান্য বিষয়াদি পরিচালনা করবেন। স'ানীয় প্রয়োজন অনুসারে আইন প্রণয়ন করার জন্য প্রাদেশিক পরিষদকে ক্ষমতা দেয়া হবে। এই আইন অবশ্যই সাংবিধানিক এবং কেন্দ্রীয় আইনকানুনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকতে হবে। আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা উভয় কক্ষের সম্মতিতে অথবা সুপ্রিমকোর্টের মাধ্যমে সমাধান করে নিতে হবে। প্রদেশের উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারকে যতোদূর সম্ভব ক্ষমতা এবং দায়িত্ব অর্পণ করবে। প্রদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা এবং পরিকল্পনার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারকে স্বাধীনতা ও ক্ষমতা প্রদান করা হবে। অবশ্য এ পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় পরিকল্পনার সাথে সমন্বিত হতে হবে এবং তা অবশ্যই জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার পরিপন'ী হতে পারবে না। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের যে কোনো অংশে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি       বাস-বায়ন করার অধিকার রাখবে।
জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট প্রদেশের প্রাদেশিক সরকারের অধীনে থাকবে। সরকারের বিদ্যমান সকল বিভাগ, উন্নয়ন সংস'া ও অন্যান্য সংস'াসমূহ বিভক্ত করা হবে এবং প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস- করা হবে। প্রদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রাদেশিক পুলিশ ব্যবস'া প্রবর্তন করা হবে। অবশ্য ক্যাডার কর্মকর্তা, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দায়িত্ব ফেডারেল সরকারের হাতে থাকবে। প্রাদেশিক সরকারের প্রয়োজন অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার এদের নিয়োগদান করবে। প্রত্যেক প্রদেশে হাইকোর্ট থাকবে। হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্টের অধীনে থাকবে। প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে যদি আলাদা করা হয় তাহলে বিচার ব্যবস'ার নিম্নকক্ষ হাইকোর্টের অধীনে থাকবে অথবা যদি বর্তমান অবস'া বলবৎ থাকে তাহলে তার প্রশাসন প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস- থাকবে। উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচির বাস-বায়ন জোরদার করার জন্য প্রাদেশিক সরকারের অধীনে প্রত্যেক জেলাকে উপজেলার সাথে উন্নয়ন ইউনিটে রূপান-রিত করা হবে। জেলা এবং উপজেলাকে সকল প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে- যাতে করে স'ানীয় জনগণকে ব্যাপক হারে কর্মসংস'ানের আওতায় আনা যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে প্রাদেশিক সরকারকে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং দাতাদের কাছ থেকে উন্নয়ন সহযোগিতা নেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হবে।
বর্তমান বিভাগীয় সদর দপ্তরকে প্রাদেশিক রাজধানী ঘোষণা করা হবে। এছাড়া বিভাগ বাদে যেখানে প্রদেশ গঠনের প্রস-াব করা হয়েছে- সেখানে সুবিধামত গুর"ত্বপূর্ণ স'ানে প্রাদেশিক রাজধানী করা হবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় সরকারের রাজধানী থাকবে বলে ঢাকা প্রদেশের রাজধানী এই প্রদেশের অপর গুর"ত্বপূর্ণ শহর ময়মনসিংহে করা যায়। প্রাদেশিক রাজধানীতে প্রাদেশিক সচিবালয় স'াপন করা হবে এবং সচিবালয়ের আয়তন সম্ভাব্য ছোট করা হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের মতো প্রাদেশিক সরকারের মেয়াদকাল হবে ৫ বছর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রাদেশিক নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। যদি ফেডারেল সরকার পদত্যাগ করে অথবা সংসদে ফেডারেল সরকার আস'া ভোটে হেরে যায় অথবা কোনো কারণে যদি কেন্দ্রীয় সরকার ৫ বছরের মেয়াদকাল অতিক্রম করতে না পারে তাহলে প্রাদেশিক সরকার বহাল থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকার কোনো কারণে মেয়াদকাল পূর্ণ করতে না পারলে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের মেয়াদকাল পরবর্তী ৫ বছর হতে পারবে না। অর্থাৎ ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হতে যে সময় বাকি থাকবে- মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর প্রতিষ্ঠিত সরকার সেই বাকি সময় ক্ষমতায় থাকবে। ৫ বছরের মেয়াদ শেষে একই সাথে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় সর্বময় ক্ষমতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতেই থাকবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় প্রাদেশিক সরকারের নির্বাহী কর্মকাণ্ড একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স'গিত রাখা যেতে পারে। যদি কোনো প্রাদেশিক সরকার পূর্ণ মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ সময়ের পরে পদত্যাগ করে অথবা কোনো কারণে যদি প্রাদেশিক সরকার মেয়াদকাল পূর্ণ করতে সক্ষম না হয় তাহলে উক্ত প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্ত করে সেখানে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সময় পর্যন- তা বলবৎ থাকবে। আর যদি কোনো প্রাদেশিক সরকার পূর্ণ মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ সময়ের আগে পদত্যাগ করে কিংবা কোনো কারণে প্রাদেশিক সরকারের পতন ঘটে, তাহলে প্রাদেশিক গভর্নরের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ওই প্রদেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকার মেয়াদের অবশিষ্ট সময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবে।
ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে সম্পর্ক : সকল প্রাদেশিক সরকার সময়ে সময়ে প্রবর্তিত নীতি ও আইন অনুযায়ী অথবা সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে ফেডারেল সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
প্রশাসন চালানো এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারকে যথাসম্ভব স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্যই প্রাদেশিক সরকারের কর্মকাণ্ড তদারক করবে। সংবিধান কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের কাজের পালা পরিধি নির্ধারণ করে দেবে (সে ক্ষেত্রে প্রস-াবিত প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তন করার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যেসব দেশে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া বলবৎ আছে- সেসব দেশের সংবিধান অনুসরণ করা যেতে পারে)।
জাতীয় ও প্রাদেশিক বাজেট, শুল্ক আদায়, প্রাদেশিক সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন তহবিল প্রদান, প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'ায় জাতীয় নিরাপত্তার ব্যবস'াদি, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিমণ্ডলে উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়াদি সম্পর্কে সংবিধানে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকবে। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিলে সংবিধান  মোতাবেক সমাধান করতে হবে।
প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'ার সুবিধাদি : বাংলাদেশ মূলত প্রায় সমজাতীয় জাতিসত্তার জনঅধ্যুষিত দেশ। মোট জনসংখ্যার ৯৯ ভাগ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। জনসংখ্যার ৮৫ ভাগই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টানে-র দেশ। এখানে সংবিধান-প্রদত্ত বিধানের ফলস্বরূপ একই ভাষা ও ধর্মের বেশিরভাগ নাগরিক যে সুফল ভোগ করবে- বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের সংখ্যালঘু নাগরিকরাও সমানভাবে সেই সুফল ভোগ করবে। প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তন করা হলে কোনোভাবেই আঞ্চলিকতা সৃষ্টি হওয়া কিংবা বিভক্ত হয়ে যাওয়ার কোনো ধরনের আশংকা থাকবে না। বরং প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'ায় সারা দেশে সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এতে করে জাতীয়, প্রাদেশিক ও তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা দেশব্যাপী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জোরদার করতে পারবেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে স'ানীয়ভাবে কর্মসংস'ান সৃষ্টি হবে। স'ানীয় উন্নয়ন তদারকি করা কিংবা উন্নয়নের ক্ষেত্র বাছাই করার জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স'ানীয় সংসদ সদস্য, প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে উন্নয়ন উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ পদ্ধতি সরকারের সর্বস-রের কার্যকলাপের দায়-দায়িত্ব ও স্ব"ছতা নিশ্চিত করতে পারবে। যে দল অথবা দলসমূহের কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় থাকবে তারা পরবর্তী নির্বাচনে আবার বিজয়ী হবার জন্য তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কিংবা জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধির জন্য প্রদেশের উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জনের যথাসম্ভব চেষ্টা করে যাবে। এর ফলে স'ানীয় উন্নয়ন আরো জোরদার হবে, দুর্নীতি দূর হবে এবং উন্নয়ন তহবিলের অপচয় কমে আসবে। অবশ্য সরকারি কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ব্যবস'া প্রবর্তন করা হলে জনগণ খুব কাছে থেকে সরকারের কর্মকাণ্ড অবলোকন করতে পারবে। এতে করে প্রাদেশিক সরকারের দায়বদ্ধতা এবং স্ব"ছতা আরো জোরদার হবে। প্রাদেশিক রাজধানী হবে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, বিচার ব্যবস'া এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্র। এর ফলে জনগণ কেন্দ্রীয় রাজধানীর বদলে প্রাদেশিক রাজধানীর দিকে ঝুঁকে পড়বে এবং কেন্দ্রীয় রাজধানীতে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ কমে আসবে। প্রাদেশিক শাসন ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে কেন্দ্রীয় রাজধানী বাদে দেশে আরো ৮টি গুর"ত্বপূর্ণ বড় শহর গড়ে উঠবে। এখানে কর্মসংস'ানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আমাদের দেশে নতুন শাসন ব্যবস'া বাস-বায়ন এমন কোনো কঠিন কাজ নয়। এখানে দল-মত নির্বিশেষে সকলের একান- আন-রিকতা ও ঐকমত্য সৃষ্টি হলে অল্প সময়ের ব্যবধানেই প্রাদেশিক সরকার ব্যবস'া প্রবর্তন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রথম প্রয়োজন হয় সংবিধানের পরিবর্তন। এই সংবিধান পরিবর্তনের জন্যই সবার আগে প্রয়োজন সকল দলের ঐকমত্যে পৌঁছা। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। এ দেশে আমিই প্রথম প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছি বলে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে সকল কৃতিত্বই যে আমার অনুকূলে চলে আসবে- তা নয়। দেশ ও জাতি উপকৃত হবে সেটাই হবে বড় কথা।
প্রথমে আমি যখন এই প্রস-াবটি উল্লেখ করেছিলাম- তখন রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিসি'তির কথা বিবেচনা করে তিন পার্বত্য জেলাকে নিয়ে একটি প্রদেশ গঠনের কথা চিন-া করেছিলাম। কিন' এখন মনে করছি যে, প্রস-াবিত চট্টগ্রাম প্রদেশের ভৌগোলিক আয়তন সুবিধাজনক হয়নি। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে চট্টগ্রাম প্রদেশ এবং বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালী নিয়ে কুমিল্লা প্রদেশ গঠন করা হলে ভৌগোলিক দিক থেকে এই অঞ্চলের জনগণের জন্য সুবিধাজনক প্রদেশ গঠিত হতে পারে। আলোচনা-পর্যালোচনা করে এই ধরনের আরো পরিবর্তন-সংশোধন-সংযোজন আমরা করে নিতে পারি।
কোনো সংস্কার খুব সহজে বাস-বায়ন সম্ভব হয় না। আমি যখন মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করেছি কিংবা থানাকে উপজেলা করেছি, সেই সংস্কারও প্রথমে অনেকে সহজভাবে গ্রহণ করেননি। অর্থনৈতিক অবস'্‌া- পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন' দেশের মানুষ এখন তো সেই প্রশাসনিক সংস্কারকে যুগান-কারী বলে বর্ণনা করছেন। আমি মনে করি, প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনা-অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি-উন্নয়ন এবং শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুফল বয়ে আনবে। আমার প্রস-াবনার মধ্যে ত্র"টি-বিচ্যুতি বা ঘাটতি থাকতে পারে। আলোচনার মধ্য থেকেই আমরা তা সংশোধন করে নিতে পারবো বলে একান-ভাবে বিশ্বাস করি।
প্রসঙ্গ কথা :  ১৯৯৮ সালের কথা। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ব্যর্থতাও দেশবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলতে শুর" করেছে। জনগণ আন্দোলনমুখর হয়ে ওঠে। সে সময় আমি একটি বিষয় উপলব্ধি করলাম যে, সরকারের পর সরকার বদল হবে অথচ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না- এভাবে আর কতদিন চলবে। বোতলের পর বোতল পরিবর্তন হয় কিন' তার ভেতরের মদ যদি থেকেই যায় তাহলে সে পরিবর্তনে লাভ কী। সুতরাং রাষ্ট্র পরিচালনায় পদ্ধতির পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই উপলব্ধি থেকে ওই সময় এক জনসভায় বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের পরিকল্পনার কথা উত্থাপন করেছিলাম। আমার মনে হলো- মানুষ আমার প্রস-াবটিকে গ্রহণ করেছে। তারপর বিষয়টিকে নিয়ে আরো ভাবলাম। এই প্রস-াবের বিষয়টি    পত্র-পত্রিকায়ও ফলাও করে প্রচার হয়েছে। কোনো মহল থেকে আমার এই   প্রস-াবের বিপক্ষে কোনো বক্তব্য এলো না। শেষ পর্যন- ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের   প্রস-াবটিকে প্রধান অঙ্গীকার হিসেবে অন-র্ভুক্ত করা হয়। নির্বাচনে আমরা সরকারে যেতে না পারায় প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের দাবিটিকে পার্টির প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করি। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রাদেশিক ব্যবস'ার একটি প্রাথমিক কাঠামো আমি তৈরি করি। এই খসড়া কাঠামোটি একটি পুসি-কাকারে প্রকাশ করে দলীয় কর্মীদের মাঝে প্রচার করা হয়। এরপর ২০০৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর আমি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমার প্রশাসনিক সংস্কারমূলক প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের প্রস-াব উত্থাপন করি। এ প্রসঙ্গে অতীতের একটি ঘটনাও এখানে বলতে চাই। ক্ষমতায় থাকাকালে আমার একটি সংস্কার প্রস-াব ছিলো উপজেলা প্রবর্তন। সে সময় আমি প্রবল সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিন' প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের প্রস-াব উত্থাপনের পর কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সমালোচনার মুখে পড়িনি। আমার বিশ্বাস- দেশের সকল রাজনৈতিক দল প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করেছে। তবে প্রাদেশিক ব্যবস'া প্রবর্তন পরিকল্পনার ওপর ঢাকায় একটি সেমিনার অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিক নির্মল সেন এই প্রস-াবের কিছু সমালোচনা করে দৈনিক যুগান-রে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। আমি তার জবাবে একটি নিবন্ধ লিখেছি, যা দৈনিক যুগান-রেই প্রকাশিত হয়েছে।

 


created by CreativeIT lTD.