• Home
  • About us
    • Constitution
    • Theme Song
  • Photo Gallery
  • News
    • News
    • Press Relase
    • Press secretary
  • Organization
    • Central Commitee
      • Presidium member
      • Advisory council
      • Vice Chairman
      • Joint secretary
      • Organizational secretary
      • Divisional Secretary
      • Joint oraganizational secretary
      • Joint Divitional Secretary
      • Executive Member
    • Sub-Organization
  • Central Office
    • Central Office
    • Chairman Office
Chairman corner
  • Biograpy
  • Speech of the president
  • Article of president
  • Media conferences
  • 9 years achivement progress
  • Poem
  • Song
Main Menu
  • Home
  • News
  • Citizen chatter
  • Bangladesh constitution
  • Federal Government
  • National News Paper
  • Book of Ershad
  • Video
  • Contact us
Home Article of president

আমার জীবনের বৈচিত্র্যময় ঈদ

ঈদ অর্থই যখন খুশি, তাই ঈদ নিয়ে কিছু লেখার মধ্যেও খুশির বিষয়টা মুখ্য হয়ে দেখা দেয়। কিন' কীভাবে সেই খুশির প্রকাশ ঘটানো যায়। কবি কায়কোবাদের উক্তি দিয়েই শুরু করা যাক। ঈদ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন-
“কুহেলির অন্ধকার সরাইয়া ধীরে ধীরে ধীরে
উঠেছে ঈদের রবি উদয় অচল গিরি শিরে
অই হের বিশ্বভূমে কি পবিত্র দৃশ্য সুমহান
প্রকৃত আনন্দময়ী চারিদিকে মঙ্গলের গান।”
পবিত্র ঈদ যখন সামনে সমাগত তখন মনের ভেতরে অজানে-ই মঙ্গলের গানের সুর বেজে ওঠে। ত্রিশদিন সিয়াম সাধনার পর যে দিনটি মুসলিম জাহানের সামনে হাজির হয়, সে দিনের মহিমা, অপার আনন্দ ও হৃদয়ের গভীর উদ্বেলতা বর্ণনায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। তা শুধু হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায়। আবার সব উপলব্ধি ভাষায় প্রকাশ করাও যায় না। আত্মাকে শুদ্ধ করা এবং সংযমের শ্রেষ্ঠতম উপায় রোজা পালন। রোজার মাধ্যমে মহান সৃষ্টিকর্তাকে লাভ করা যায়, স্বাস'্য রক্ষা করা যায় এবং কুপ্রবৃত্তির ইচ্ছাকে নিবৃত্ত রাখা যায়। এই পবিত্রতার সিঁড়ি বেয়ে আসে ঈদ। সেই আনন্দেই বিশ্ব প্রকৃতিতে মঙ্গলের গান বেজে ওঠে। মানব সমাজ সেই সুরে মোহিত হয়।
ঈদ কোনো বিশেষ মানবগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ বিষয় নয়। এটা সার্বজনীন। চন্দ্র-সূর্য্ল, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড, আকাশ-বাতাস, নদী সমুদ্রের মতোই সার্বজনীন। ঈদের আনন্দ- সাগরে সবাই অবগাহন করতে পারে। আমিও্ল পরিণত বয়সে এই আনন্দের ভাগ নিতে এতোটুকু ইতস-ত করি না। নিজেকে দেখতে পাই চঞ্চল কিশোরের মাঝে। সে যেনো আমারই প্রতিচ্ছবি। সত্যি-সত্যিই ঈদের দিনে আমি ফিরে যাই আমার দুরন- কৈশোরে- উদ্যম যৌবনে। ঈদকে উদযাপন করি আনন্দের মাঝে হৃদয়কে উজাড় করে। ঈদ মানেই তো আনন্দ। মনের আনন্দই দেহের শক্তির উৎস। তাই মহান আল্লাহতায়ালা ঈদের মধ্যে জীবন-শক্তির একটি বড় উপাদান রেখে দিয়েছেন। এই দিনটিতে হিংসা-বিদ্বেষ, উঁচু-নীচু ভেদাভেদ, রাগ-অনুরাগ, দুঃখ-ক্ষোভ-বেদনা সবকিছু ভুলিয়ে মানুষকে জীবনানন্দে মাতিয়ে তুলতে শেখায়।
এমন একটি মহিমাময় দিনকে সামনে রেখেও রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিবেশ পরিসি'তির কারণে মনের মাঝে হতাশার গুবরে পোকা বিড়-বিড় করে ওঠে। প্রশ্ন জাগে- সবাই সবাইকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করতে পারবে তো? ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যে পঙ্কিল রাজনীতি কালি ছিটাবে না তো? কোনো আতঙ্ক ঈদের আনন্দ সুরকে বেসুরা করে তুলবে না তো? ঈদের মিলন মাঙ্গলিক গান যদি আমরা জীবনের সকল ক্ষেত্রে সকল সময় সকল স-রে গাইতে পারতাম- সেই স্বপ্ন আমাকে সব সময় বিভোর করে রাখে। তাই প্রত্যাশায় থাকি এই দিনের। অপেক্ষায় থাকি এই দিন উদযাপনের। একে একে জীবন থেকে কতোটা বছর পার হয়ে গেলো। যুগের পর যুগ চলে গেলো। প্রায় পৌনে এক শতাব্দী অতিক্রম করলাম। নতুন আর একটি শতাব্দীতে প্রবেশ করেছি। এতোটা দীর্ঘ সময় ঈদ উদযাপনে যেনো কখনো গতানুগতিকতার আবর্তে জড়িয়ে পড়িনি। প্রত্যেক বার যেনো জীবনে ঈদ এসেছে নতুন রূপে- নতুন বেশে।
আমার জীবনের বাঁকে বাঁকে পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনের ধারায় ঈদকে বরণ করেছি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। এখন যেহেতু রাজনীতির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছি, নিজে সফল কি বিফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সে বিচারের ভার আমার হাতে নেই। তবে মানুষের সাথে সম্পৃক্ততা আছে বলে তারা আমার ঈদ উদযাপনের খবর রাখে। পত্র-পত্রিকা থেকেও জানতে চায়- কোথায় ঈদ করবো, কোন ঈদগাহে নামাজ আদায় করবো। ঈদের দিনটিতে আমার সময় কীভাবে কাটবে। এসব জানার বা জানানোর খুব যে কোনো অর্থ আছে তা মনে করি না, তবে কারো মধ্যে আগ্রহ কিছুটা দেখা যায়। সে কারণেই এই লেখা।
একটু আগে বলেছি- আমার জীবনধারা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন গতিতে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে ঈদ উদযাপন করেছি ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ ও পরিসি'তিতে। যখন ছোট ছিলাম সেই সময়ের ঈদের আমেজ ছিলো অতুলনীয়। নতুন জামা পরে ঈদের ময়দানে যাবার সে আনন্দ জীবনে আর কখনো ফিরে পাবো না। তবে আজকের শিশু-কিশোরের মধ্যে যখন নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করি তখন সত্যিকারভাবে আমি ভুলে যাই আজ আর সেদিনের মধ্যে কোনো ব্যবধান আছে। আজকের কিশোরকে মনে হয় যেনো আমার মনেরই আয়না। যার মধ্যে দেখি নিজেরই প্রতিচ্ছবি। তখন ঈদ উদযাপনের মধ্যে খুঁজে পাই আমার কৈশোরের সেই উচ্ছল আর উচ্ছ্বাসময় মুহূর্তগুলোকে। আবার নিজের দিকে যখন ফিরে তাকাই তখন হিসাব মেলাতে পারি না- কখন হারিয়ে গেলো জীবনের স্বর্ণালী দিনগুলো। প্রতিদিন ঈদের আনন্দ খুঁজি বলেই কী এতোগুলো ঈদের সাথে অজানে- ফুরিয়ে গেলো সময়ের সিঁড়ি! এসব ভাবনাও মাঝে মাঝে কুরে-কুরে খায়। ভাবতেও এখন কেমন লাগে- এক সময় ঈদের আনন্দে মাঠময় ছুটে বেড়াতাম, বন্ধুদের নিয়ে আনন্দ করতাম, বয়োজ্যেষ্ঠদের সালাম করে উপহারের খুশিতে মেতে উঠতাম। স্বপ্ন জাগে- যদি আবার সেই দিন ফিরে আসতো!
আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো কর্মজীবনে আমার ঈদ কেটেছে গতানুগতিকতায়। চাকরির কারণে অনেক ঈদ কর্মক্ষেত্রেই উদযাপন করেছি। সৈনিক ছিলাম। নিয়মের ছকে বাঁধা ছিলো আমাদের জীবন। সারাটা বছর অপেক্ষা করতাম এই একটি দিনের। এই দিন নিয়মের বেড়াজাল আমাদের আটকে রাখতে পারতো না। বিশ্বজনীন ঈদের সাথে আমরা সবাই গা ভাসিয়ে দিতে পারতাম। সিনিয়র জুনিয়র, অফিসার বা সেপাই, এমনকি একজন ঝাড়-দার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কর্মকর্তার মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকতো না। সেদিন মনে হতো এটাই মানবজীবনের আসল চিত্র। বাকি সব দু’দিনের খেলা। জীবন নাটকের দৃশ্যমাত্র। আমার কর্মজীবনের পুরোটা সময়ই তো কেটে গেছে সেনানিবাসে। বাইরের জীবন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা জীবন-প্রণালী সেখানে। ইচ্ছা করলেই ঈদের সময় ছুটি নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম না। সেইসব ঈদে মাকে অনুভব করতাম মনের সব ব্যাকুলতা উজাড় করে দিয়ে। মাকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণাগুলো জর্জরিত করে রাখতো রমজানের শুরু থেকেই। ভাবতাম- এবার আর মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করতে পারবো না। মায়ের হাতের ছোঁয়া লাগবে না আমার মাথায়। মায়ের হাতের তৈরি খাবার এবার আর খাওয়া হবে না। জীবনে কতো সুস্বাদু খাবারই তো মুখে দিয়েছি। কিন' মায়ের হাতের তৈরি খাবার কিংবা তার দেয়া খাবারের মতো মহাতৃপ্তি জোগানো খাবার পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাইনি। সেই মাকে দূরে রেখে ঈদ উদযাপনের আনন্দটাই উপভোগ করতে পারতাম না। তারপর সৃষ্টির অমোঘ বিধানে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান- সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধার- সবচেয়ে বড় ভালোবাসার- সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি আমার মা এই পৃথিবীর সব মায়া কাটিয়ে প্রাণাধিক প্রিয় সন-ানদের চিরদিনের জন্য এতিম করে দিয়ে চলে গেলেন। একদা মনে হতো মাকে ছাড়া কি ঈদ হয়? অথচ আজ বেশ ঈদ করে যাচ্ছি। ঈদের জামায়াত থেকে ঘরে ফিরে মাকে পাই না। তার চিরসি'র ছবিটার সামনে দাঁড়াই। ছবির অপলক চোখ দুটো আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে হয় মা যেনো এখনো আমাকে দোয়া করছেন। কিন' তার পবিত্র পা আমি ছুঁতে পারি না। ভারাক্রান- হয়ে ওঠে মন। মা-হারা সন-ানের আকূল আকুতি দুমড়ে-মুচড়ে দেয় সকল আনন্দধারা। আবার ফিরে আসতে হয় বাস-বে। মনের গভীর কোণে মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা লুকিয়ে রেখে ঈদের আনন্দে গা ভাসিয়ে দিতে হয়। এভাবেই চলে এখনকার জীবন।
এক সময় অযাচিতভাবেই দায়িত্ব এলো রাষ্ট্র পরিচালনার। পবিত্র এই দায়িত্ব। মহান আল্লাহপাকের ইচ্ছার প্রতিফলন। দেশ পরিচালনা এবং দেশের মানুষের দায়িত্ব গ্রহণ করা কঠিন থেকে কঠিনতম কাজ। রাষ্ট্রপ্রধানের সাফল্য বা ব্যর্থতাই হচ্ছে দেশ ও জাতির সুখ-শানি--উন্নতি-অবনতি নির্ধারণের মাপকাঠি। তাই ক্ষমতা গ্রহণ করেই নিজেকে উৎসর্গ করেছিলাম সাফল্য অর্জনের সংগ্রামে। মায়ের দোয়া ছিলো সাথে। ঈদের সময় দোয়া চেয়ে মাকে বলতাম- দোয়া করো মা, আমি যেনো আমার দেশের মানুষকে সমানভাবে ঈদের আনন্দে ভরিয়ে রাখতে পারি। মা প্রাণভরে দোয়া করতেন। আজো মনে হয়- আমি দেশের জন্য যা কিছু ভালো কাজ করতে পেরেছি তার পেছনে ছিলো মায়ের দোয়া। আমার সৌভাগ্য মা আমাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখে গেছেন, আমার দুঃখ আমার বাবা আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখে যেতে পারেননি।
রাষ্ট্রপতির জীবন- সেও নিয়মের নিয়ন্ত্রণে আবদ্ধ থাকে। ইচ্ছা করলেই সবকিছু করা যায় না। তবে ঈদের দিনে কিছুটা ব্যতিক্রম তো থাকেই। ঈদগাহে ভেদাভেদহীনতায় মহান ইসলামের মহত্বে হৃদয়-মন পবিত্রতায় ভরে ওঠে। মনে জেগে ওঠে- একদিন তো এভাবেই রাজা-প্রজার ভেদাভেদ থাকবে না। সবাই এক ময়দানে দাঁড়াবো। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাষ্ট্রপতি-জীবনে ঈদ উদযাপনে ধর্মীয় অনুভূতিতে সিক্ত থাকলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে সম্পূর্ণ প্রাণের ছোঁয়া কিছুটা হলেও ম্লান থাকতো। অনেকেই ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসতেন দেশের রাষ্ট্রপতির সাথে। ব্যক্তি এরশাদের সাথে নয়। সেখানে আমি প্রাণের স্পর্শ অনুভব করতাম না। রাষ্ট্রীয় পরিবেশে ঈদ উদযাপনে আনুষ্ঠানিকতার একটা বিষয় জড়িয়ে থাকে। সেসব কিছু সব সময় ভালোও লাগতো না। ঈদ মানে উৎসব। সেই উৎসব নিয়ন্ত্রিত হলে সেখানে প্রাণের আমেজ থাকে না- সেটাই উপলব্ধি করতাম রাষ্ট্রপতি- জীবনে। অনেক সময় মনে হতো- আজ যারা আমার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এসেছে এবং অত্যন- বিনয় প্রকাশ করছে, এটা তাদের হৃদয়ের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ নয়। তখন কিছুটা হলেও নিজেকে গুটিয়ে নিতাম। তবে ব্যক্তি আমাকে ভালোবেসেও অনেকে আমার কাছে ঈদের দিনে আসতেন, তাদের নিয়ে ঈদের আনন্দে মেতে উঠতাম। সবচেয়ে ভালো লাগতো যখন এতিমদের কাছে যেতাম। তাদের হতভাগ্য জীবনে দেশের একজন রাষ্ট্রপতির খানিকটা সময়ের সান্নিধ্য আনন্দধারায় স্রোতের সঞ্চালন ঘটাতো। ওদের কচি মুখের হাসিতে দেখতাম- ঈদের সত্যিকার আনন্দগুলো চিক চিক করে উঠেছে। নিজেকে তখন ধন্য মনে করতাম। মনে হতো আমার উপসি'তিটাই ওদের ঈদের বড় উপহার। যা-হোক, ধরা-বাঁধা নিয়মের মধ্যেই দেশের রাষ্ট্রপতিকে ঈদ উদযাপন করতে হয় এবং সেটাই পালন করতাম তখন। একজন নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সারাটা বছর ব্যস- জীবন কাটানোর পর ঈদের একটা দিন সারাদেশের মানুষের আনন্দের অনুভূতি উপলব্ধি করতাম- সেটাই ছিলো আমার তখনকার জীবনের সবচেয়ে বড় ঈদ উপহার।
ওই যে বলেছি- সময়ের বাঁকে বাঁকে আমার জীবনের গতিধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। রাষ্ট্রপতি-জীবনের পর রাজনৈতিক কারণে বদলে গেছে আমার জীবনধারা। যেতে হলো আমাকে জেলে। কেনো গেলাম- এখানে সে আলোচনায় যাবো না। বন্দি জীবনে ঈদ কেমনভাবে উদযাপন করেছিলাম- সেই স্মৃতি খানিকটা এখানে মন'ন করতে চাই। জীবন থেকে চলে গেছে আমার বারোটা ঈদ অলক্ষ্যে- খাঁচার পাখির মতো নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে ডানা ঝাপটিয়ে। ঈদের আকাশে যখন পাখা মেলে উড়ে চলা বলাকার মতো সাদা পাঞ্জাবি পরা মানুষেরা শুভেচ্ছা বিনিময়ের পালা বদল করে চলেছে- আমি তখন একাকী নিঃসঙ্গ এক শিকলপরা মানুষ বন্দি যন্ত্রণায় কাতর মিনতি জানিয়েছি আল্লাহর দরবারে- আমাকে ঈদগাহে নামাজ পড়তে দাও। আমি একটি জাতীয় ঈদগাহ তৈরি করেও বারোটা ঈদের নামাজ জামাতে পড়তে পারিনি। সেই বারোটা ঈদ আমার জীবনে আর ফিরে পাবো না। দোষ কাউকে দেবো না তার জন্য। হয়তো এটাই ছিলো আমার নিয়তির বিধান!
পরিবেশ পরিসি'তির কারণে রোজার দিনে সেহেরি খেয়ে রোজা রাখতে পারতাম না। কারণ জেলখানায় সন্ধ্যা বেলায় সেহেরির জন্য যে খাবার দিয়ে যাওয়া হতো- ভোর রাতে তা খাওয়ার উপযুক্ত থাকতো না। তাই প্রায়ই এক গ্লাস পানি খেয়ে রোজা রাখতাম। তারপর এক সময় ঈদের পবিত্র দিনটি সামনে আসতো। মনে পড়তো নজরুলের কবিতার চরণ-
“শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো
কত বালুচরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো
বরষের পরে আসিল ঈদ।”
সেই প্রতীক্ষিত ঈদ-আনন্দের এতোটুকু ভাগ নিতে পারতাম না। তবুও ভোরবেলা গোসল সেরে মনের মাঝে ঈদের ময়দান তৈরি করে ছোট পরিসরের কক্ষের মধ্যেই জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যেতাম। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্যও কাউকে কাছে পেতাম না। অপেক্ষায় থাকতাম- বাসা থেকে হয়তো কিছু খাবার আসবে। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা আসবে। কাচের দেয়ালের ওপার থেকে ওদের দেখবো। ইন্টারকমের মাধ্যমে ওদের বলবো- ঈদ মোবারক ! এসবই ছিলো আমার জেল জীবনের ঈদ উদযাপন। কান্নাভেজা কণ্ঠের আওয়াজ আসতো ইন্টারকমে- ঈদ মোবারক। কাচের ওপার থেকে দেখতাম- ঈদের আনন্দের দিনে স্ত্রী-পুত্র-কন্যার অশ্রুভেজা চোখ। এভাবেই কেটে গেছে আমার জীবনের বারোটা ঈদ।
ঈদের খাবারের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে। বাসা থেকে চার বাটির একটি টিফিন ক্যারিয়ারের তিন বাটিতে ঈদের খাবার এসেছে। আমার মনে হলো- আরো একটি বাটি হয়তো ছিলো। খাবার না থাকলেও চতুর্থ একটি বাটি থাকা উচিত। তা না হলে ক্যারিয়ারটা ঠিকমতো বন্ধ করা যায় না। যাহোক, তিন বাটিতে যে খাবার ছিলো সেটাই খেয়ে নিলাম। তার বেশ কয়েকদিন পর আদালতে হাজিরা দেবার সময় আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম- ঈদের দিনে তিন বাটিতে খাবার পাঠালে বাকি বাটিটা পাঠালে না কেনো। তিনি জানালেন- চতুর্থ বাটিটায় গরুর গোশত ছিলো। সেটা জেল কর্তৃপক্ষ ভেতরে পাঠাতে দেয়নি। কারণ ঈদের দিনে কী কী খাবার দেয়া হবে সে ব্যাপারে একটা আবেদন করতে হয়েছিলো। কিন' আবেদনপত্রে গরুর গোশতের কথা উল্লেখ ছিলো না। তাই গরুর গোশতের বাটিটা দিতে দেয়নি। এ কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আমার আর কোনো উত্তর দেবার ছিলো না।
ঈদের দিনে জেলখানায় বসে ভাবতাম দেশের মানুষের কথা। ভাবতাম আজ হয়তো ওরা আনন্দেই আছে। যে যার অবস'ানে থেকে যে যার সাধ্যমতো ঈদ উদযাপন করছে, ঈদের আনন্দ উপভোগ করছে। এই অনুভূতিই আমার ছিলো ঈদের আনন্দ উপহার। তবে আমি তো চিরদিন আশাবাদী মানুষ। আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রেখে আশায় বুক বেঁধে রাখতাম। এই মেঘ হয়তো একদিন কেটে যাবেই। মেঘের আড়ালেই তো সূর্য হাসে। হারানো শশীর হারানো হাসি এক সময়ে অন্ধকার দূর করেই ফিরে আসে। আমি সেই অপেক্ষায় ছিলাম এবং সে অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।
এখন আমি মুক্ত মানুষ। মুক্ত মনে মুক্ত চিন-ার রাজনীতি করি। মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করি। মুক্তভাবে আপনজনের সান্নিধ্যে যাই। আমার জীবনে এসেছে নতুন অতিথি। সে আমার প্রাণের এক টুকরা- আমার এরিক! ওকে নিয়ে ঈদ উদযাপনে আনন্দের আতিশয্যে ভুলে যাই জীবনের সব দুঃখ বেদনার-তিক্ততার স্মৃতি। অনুভব করি নতুন প্রাণের নতুন স্পন্দন। এরিকের মুখচ্ছবিতে দেখি আমার বাল্যজীবনের স্মৃতি। সেই সাথে পাশে পাই অনেক পোড় খাওয়া আমার রাজনৈতিক কর্মীদের। আমার আদর্শের সন-ানদের। রাজনৈতিক আদর্শের সন-ান একজন রাজনীতিকের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমার সেই সন-ানেরা আমার সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় সব সময় পাশে থাকতে চায়। ঈদের দিনে আমার রাজনৈতিক কর্মীদের মুখগুলো সবচেয়ে ভালো লাগে। এখন আমি ক্ষমতায় নেই। কিছু দেয়ারও নেই আমার। সুতরাং এখন যারা আমার কাছে আসে তারাই আমার প্রকৃত আপনজন- হৃদয়ের মানুষ, তারাই আমার সুহৃদ বন্ধু। জীবনের শেষ প্রানে- এসে আমি আপনজনদের খুঁজে নিতে পেরেছি- এটাই এখনকার ঈদে আমার বড় আকর্ষণ। একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিক হিসেবে আমি দেশের লাখো কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। যেখানে যাই, দেশের যে প্রানে- গিয়ে দাঁড়াই- সেখানেই আমার ভালোবাসার মানুষগুলো ছুটে আসে। তারা আমার কথা শুনতে চায়- পেতে চায় হাতের পরশ, জানতে চায়- আমি কেমন আছি। ঈদের আনন্দের মতো সে আনন্দ আমি উপভোগ করি প্রতিনিয়ত-প্রতিদিন- প্রতিমুহূর্তে। আমি ঈদের অনুভূতিতে ব্যক্ত করি, প্রতিটি মানুষের জীবনে ঈদের আনন্দ ভরে থাকুক প্রতিটি দিন- প্রতিটি রাত। পবিত্র ঈদের মর্মবাণী শানি--সৌহার্দ্য-উৎসব-আনন্দ প্রতিফলিত হোক প্রতিটি মানুষের জীবনে।

 


created by CreativeIT lTD.