• Home
  • About us
    • Constitution
    • Theme Song
  • Photo Gallery
  • News
    • News
    • Press Relase
    • Press secretary
  • Organization
    • Central Commitee
      • Presidium member
      • Advisory council
      • Vice Chairman
      • Joint secretary
      • Organizational secretary
      • Divisional Secretary
      • Joint oraganizational secretary
      • Joint Divitional Secretary
      • Executive Member
    • Sub-Organization
  • Central Office
    • Central Office
    • Chairman Office
Chairman corner
  • Biograpy
  • Speech of the president
  • Article of president
  • Media conferences
  • 9 years achivement progress
  • Poem
  • Song
Main Menu
  • Home
  • News
  • Citizen chatter
  • Bangladesh constitution
  • Federal Government
  • National News Paper
  • Book of Ershad
  • Video
  • Contact us
Home Article of president

তখন আমি সৌদি আরবে। সৌদি বাদশার অতিথি হিসেবে রাজকীয় অতিথিশালায় অবস'ান করছি। শারীরিক অবস'া চেক-আপের জন্য প্রতি ছয় মাস অন-র আমাকে রিয়াদে কিং ফয়সাল হাসপাতালে যেতে হয়। সৌদি সরকারের বদান্যতায় চিকিৎসা বা চেকআপের এই সুযোগটুকু পাই। মধ্যপ্রাচ্য তথা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সাথে আমার গড়া সুসম্পর্কের কথা সৌদিরা স্মরণ করে। বিশেষ করে কুয়েত যুদ্ধের সময় সৌদিতে বাংলাদেশের সৈন্য প্রেরণের কথা ওরা ভুলে যায়নি। শুধু সরকারই নয়, সৌদির সাধারণ মানুষেরাও আমাকে মনে রেখেছে। সৌদিতে সফরকালে কোনো বাজারে গেলে বা দোকানে কোনো কিছু কেনা-কাটার জন্য ঢুকলে ওরা চিনে ফেলে। সৌদিতে বাংলাদেশী সৈন্য প্রেরণের কথা স্মরণ করে। কিছু কেনা-কাটা করলে আমার কাছ থেকে দাম নিতে চায় না। আমাকে ‘রইস এরশাদ’ বলে সম্বোধন করে। রইস মানে রাজা। ওরা আরবিতে যা বলে তার অর্থ হলো- ‘তুমি আমাদের দেশের জন্য যা করেছো তা আমাদের মনে আছে। তোমার কাছ থেকে কোনো জিনিসের দাম নিতে পারি না। তোমার যা প্রয়োজন নিয়ে যাও।’ এসব কথা শুনে বিগলিত হই- মুগ্ধ হয়ে যাই ওদের কৃতজ্ঞতায়। সেদিন মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে বাংলাদেশের সৈন্য প্রেরণ করেছিলাম বলে সৌদিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের সম্মান এবং কদর অনেক ঊর্ধ্বে। বাংলাদেশের জনশক্তি সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারছে। সৌদি সরকার বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক সেখানে নিয়োগ করছে। জনশক্তি খাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে সৌদি থেকে। এসবই সম্ভব হয়েছে আমার একটি সিদ্ধান- থেকে। অথচ দেশে সেদিন তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কেনো আমি সৌদি আরবে সৈন্য পাঠাচ্ছি। তার প্রতিবাদে সকল বিরোধী দল মিলে হরতাল করলো। কিন' ভাগ্যের এমনই পরিহাস- সেদিন যারা সৌদিতে সৈন্য প্রেরণের বিরোধিতা করেছিলেন, তারাই এখন সেই পদক্ষেপের সুফল ভোগ করছেন। সৌদিতে গেলে ওইসব স্মৃতিকথা খুব মনে পড়ে। অসম্ভব ভালো লাগে সৌদি সফরে। পবিত্র মাটির পরশে দেহ-মনকে শুদ্ধ করে নেয়ার আনন্দ তো আছেই- সেই সাথে আরবীয়দের ভালোবাসাতেও সিক্ত হয়ে যাই।
সৌদি সফরের প্রতিদিনের মতো ৬ ফেব্রুয়ারি-০৬ তারিখের সকালটাও মধুর আতিথেয়তার অনুভূতি উপভোগ করছিলাম। এমন সময় ঢাকা থেকে ফোন পেলাম। আমার একান- সচিব খালেদের টেলিফোন। ও জানালো- মাওলানা মান্নান আর নেই। গতরাতে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেছেন। হৃদয়বিদারক খবর। খানিকটা সময়ের জন্য আমি স-ব্ধ হয়ে গেলাম। ভাবতেই পারছিলাম না মাওলানা মান্নান আর নেই! জানালা পথে আমার দৃষ্টি চলে গেলো আকাশের দিকে, শূন্য-মহাশূন্যতা যেখানে অবিরত ঘোষণা করে- একদিন সকলেই এমনিভাবে শূন্যে মিলিয়ে যাবে। ইহলোকে মাওলানা মান্নানের জীবনের অসি-ত্ব আজ শূন্য। কিন' রয়ে গেছে তাঁর স্মৃতি আর অসংখ্য অমর কীর্তি। সেই স্মৃতি আমাকে আবার স্বাভাবিক অবস'ায় ফিরিয়ে নিয়ে এলো। মাওলানা মান্নানের ইনে-কাল সম্পর্কিত বিস-ারিত খবর জেনে নিলাম। সৌদি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে একটি শোকবার্তার কথা জানালাম আমার প্রেস সচিব সুনীলকে। ওকে বললাম- আমার শোকবাণীটা পত্রিকা অফিসে পৌঁছে দিতে।
সেই শোকবাণীতে মনের শোকের উপশম হচ্ছিলো না। হৃদয়ের মাঝে জমে থাকা মাওলানার স্মৃতিগুলো আমাকে দারুণভাবে পীড়া দিচ্ছিলো। এর আগে দেশের আর এক বরেণ্য রাজনীতিবিদ, আমার অনেক দিনের সহকর্মী মিজানুর রহমান চৌধুরীও চলে গেছেন। এসব চির-বিদায় আমাকে ভারাক্রান- করে তুলেছিলো। মিজান চৌধুরীর শোক ভুলতে না ভুলতেই মাওলানা মান্নানও জান্নাতের পথে পা বাড়ালেন। মাওলানা অনেক দিন ধরেই শয্যাশায়ী ছিলেন। জীবন আর মৃত্যুর সাথে লড়াই করে চলছিলেন। কিন' শেষ পর্যন- অবধারিত পথেই তাকে পা বাড়াতে হলো। অখণ্ড মহাকালের কোলে নশ্বর জীবন প্রতিনিয়ত শেষ হয়ে যাবার পথে অগ্রসর হতেই থাকে। সেই সারা হবার অনিবার্যতা জেনেও মানুষ সৃষ্টির উৎসবে মেতে থাকে। সেটাই হয়তো পরওয়ারদিগারের ইচ্ছা। তা না হলে তার সৃষ্টি হয়তো আরো সুন্দরের দিকে ধাবিত হতো না। মাওলানা মান্নানও জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে অনেক অমর কীর্তি সৃষ্টিতে ব্রতী হয়েছিলেন। সব কথা যদি বাদও দেই- একটি কীর্তিই হয়তো তাকে আল্লাহর দরবারে নিয়ে যাবে। আর তা হলো মাওলানা মান্নান তাঁর নিজ খরচে পাঁচ হাজারেরও বেশি লোককে হজ করতে পাঠিয়েছেন। আর কোনো দিল-দরিয়া মানুষ এটা করতে পেরেছেন কিনা জানি না- তবে মাওলানা মান্নানের এই কীর্তি নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালার রেকর্ড বুকে স'ান পেয়েছে।
মাওলানা মান্নানের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ক্ষমতা গ্রহণের পর। তার আগে তিনি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তাঁর পিতা একজন পীর ছিলেন। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে তাঁর মাজার আছে। মাওলানা মান্নানের সাথে একবার মাজার জিয়ারত করে এসেছি। মান্নান সাহেবের সাথে পরিচয়ের পর থেকেই তাঁর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা এবং আন-রিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা। তাঁর ইসলামী শিক্ষা ও পাণ্ডিত্য আমাকে মুগ্ধ করে। আমি সেই প্রথম পরিচয় থেকেই উপলব্ধি করেছিলাম যে, ইসলামের সেবায় তাঁর মতো লোকের সহযোগিতা ও পরামর্শ আমার প্রয়োজন হবে। মাওলানা মান্নান আমার দলে এলেন। আমার দল থেকে এমপি নির্বাচিত হলেন। আমি তাকে গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত করলাম। সঠিক কাজের জন্য উপযুক্ত লোক যাচাই-বাছাই-এ আমার যে ভুল হয় না, মাওলানা মান্নান তার উদাহরণ।
আমি ক্ষমতায় থাকাকালে যে সব উন্নয়ন, সংস্কার ও সেবামূলক কাজ করেছি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধর্মীয় পদক্ষেপসমূহ। আমি ইসলামের সেবায় বেশ কিছু কাজ করেছি। সেগুলো আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায় বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না পারলে ওই কাজগুলো করা আমার পক্ষে কোনো দিন সম্ভব ছিল না। হয়তো আল্লাহ এই দায়িত্ব পালনের জন্যই আমার হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন। আর তাই আমি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা, জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণাসহ অসংখ্য ধর্মীয় সেবামূলক কাজ করতে পেরেছিলাম। আজ মাওলানা মান্নানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সে সব কাজের কথাগুলো স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠছে। কারণ এই কাজগুলো করার আগে ধর্মমন্ত্রী হিসেবে আমি মাওলানা মান্নানের সাথে আলাপ-আলোচনা করে নিতাম। তিনি আমার সিদ্ধানে-র ব্যাপারে ইসলামী ধারায় ব্যাখ্যা দিতেন। তাঁর ব্যাখ্যায় আমি আরো অনুপ্রাণিত হতাম। ধর্মীয় কাজ সম্পাদনে বেশি উদ্যোগী ও উদ্যমী হতাম। আমি ইসলামের সেবায় যে সব কাজ করেছি- তার মধ্যে কয়েকটির কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই। মসজিদ নির্মাণ একজন মুসলমানের জন্য পবিত্র কাজ। সেই ভাবাদর্শে আমি নিউমার্কেটে মসজিদ, সাভারে স্মৃতিসৌধ মসজিদ, পিডব্লিউডি মসজিদ, গোলাপ শাহ মসজিদ, বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাব মসজিদ নির্মাণ করেছি। মাওলানা মান্নানের একান- চেষ্টায় মহাখালীতে নির্মাণ করেছি গাউসুল আযম মসজিদ। এছাড়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, কাওরান বাজার শাহী মসজিদ, লালবাগ কেল্লার মসজিদ, ষাট গম্বুজ মসজিদ, লালবাগ জামে মসজিদ মিনার, দিলকুশা জামে মসজিদ এবং ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বহু স'ানে অনেক মসজিদ সংস্কার ও উন্নয়ন করেছি। আমিই বায়তুল মোকাররম মসজিদকে জাতীয় মসজিদ ঘোষণা করেছি। ইচ্ছা ও উদ্যোগ নিলে যেকোনো মহৎ কাজই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। পাকিস-ান আমলে ১৯৬০ সালের ১৭ জানুয়ারি তারিখে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভিত্তিপ্রস-র স'াপন করেছিলেন। এই মসজিদের নকশা প্রণয়ন করেছিলেন প্রখ্যাত স'পতি আবুল হোসেন থাইরানি। এর তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ছিলেন তাঁর ছেলে টি. থাইরানি। স্পেনের একটি বিখ্যাত মসজিদের ধারণার সাথে মিল রেখে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছিলো। এই মসজিদের পুরো প্রকল্পটি ৮ দশমিক ৩০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো। কিন' মূল নকশা অনুযায়ী এই মসজিদের অনেক কাজ অসমাপ্ত ছিলো। আমি ক্ষমতায় এসে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এর জন্য ৩ কোটি টাকার অনুদান সংগ্রহ করেছিলাম ওআইসি থেকে। বাকি ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম সরকারি তহবিল থেকে। ফলে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন জাতীয় মসজিদ।
আমি প্রায়ই মাওলানা মান্নানকে বলতাম- ইসলামের সেবায় যা কিছু করা যায় সে ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দেবেন। তিনি সেই কাজটি অত্যন- সুচিনি-তভাবে সম্পাদন করতেন। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁরই অনুপ্রেরণায় আমি প্রথমবারের মতো ১৯৮৫ সালে দাখিলকে এসএসসি সমমান এবং ১৯৮৭ সালে আলিম শ্রেণীকে এইচএসসি সমমান ঘোষণা করেছি। ১৯৮৯ সালের ১০ জুন তারিখে মাওলানা মান্নান গাউসুল আযম কমপ্লেক্সে আমার সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেছিলেন। মাওলানা ছিলেন ওই সভার সভাপতি। সে দিন আমি অভিভূত হয়েছিলাম ওই মসজিদ কমপ্লেক্সটি দেখে। কমপ্লেক্সের জায়গা বরাদ্দ করেছিলাম আমি আর নির্মাণ ব্যয়ের অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। তবে এই মসজিদ এবং কমপ্লেক্স নির্ধারণের সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন মাওলানা মান্নান। তিনি উদ্যোগী না হলে ওখানে এই পবিত্র মসজিদটি হয়তো নির্মিত হতো না। তবে সব কিছু তো আল্লাহর ইচ্ছা। এখানে মাওলানা মান্নান ছিলেন উপলক্ষ। আল্লাহ তাঁর মহতী লক্ষ্য সফল করেছেন। আজ তিনি সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তাঁর কবর জিয়ারত করতে গিয়ে মনে পড়েছে- এখানেই মাওলানার সংবর্ধনা নিতে এসে ঘোষণা করেছিলাম- ‘মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় অথবা আমার প্রিয় মাদ্রাসা শিক্ষকদের চলার পথে বাধা সৃষ্টি করার মতো কিছু হলে তা বাতিল করা হবে’। আমিই ১৯৮৯ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর শ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে এবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য অনুদান দেয়ার ঘোষণা করেছিলাম। আমি সকল সমালোচনা ও বিরোধিতা পেছনে রেখে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছি। ১৯৮৮ সালের ৭ জুন রাত ৮টা ১২ মিনিটে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান- অষ্টম সংশোধনী বিল ২৫৪-০ ভোটে পাস হয়। তার দুই দিন পর আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিলে সম্মতি প্রদান করি। ১৯৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সূত্রাপুর জামে মসজিদে মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেছিলাম- ‘ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম করায় আজ আমরা জাতীয় সত্তা লাভ করেছি।’ সেদিনও মাওলানা মান্নান আমার সাথে ছিলেন। ১৯৮২ সালে এক অধ্যাদেশবলে আমি যাকাত ফান্ড গঠন করেছিলাম। এই ফান্ড গঠনের পর বেশ কয়েকটি কল্যাণকর কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। আমি ১৯৮৩ সালে ১১টি মিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনস' ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্যতম কর্মসূচি ইসলামিক মিশনের কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। আমি যষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন- দ্বীনিয়াত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছিলাম।
কোনো স'ানে মসজিদ গড়ে ওঠার পর এলাকার জনগণই নিজেদের অর্থ দিয়ে ইমাম, মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতাদিসহ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ এমনকি পানি ও বিদ্যুতের বিলসহ যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতো। আমি ১৯৮৩ সালের ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় ইসলামী মহাসম্মেলনে দেশের সকল মসজিদের পানি ও বিদ্যুতের বিল মওকুফ করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই সাথে দেশের প্রায় আড়াই লাখ মসজিদের ৫ লাখ ইমামের জন্য মাসিক ২০০ টাকা ভাতা প্রদানের ব্যবস'া করেছিলাম। হাইকোর্টের সামনে মজা পুকুরটি ভরে সেখানে জাতীয় ঈদগাহ আল্লাহর ইচ্ছায় আমিই গড়ে তুলতে পেরেছিলাম। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, রেডিও-টিভিতে আজান প্রচারের ব্যবস'াও আমার উদ্যোগে হয়েছিলো। আজ মাওলানা মান্নানের কথাগুলো যখন অতি যত্নের সাথে স্মরণ করছি তখন ইসলামের সেবায় আমার প্রচেষ্টার এসব কথাও মনে পড়ে যাচ্ছে। তিনি আমাকে একবার শর্শিনায় পীর সাহেবের দরবারে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের সাথে ছিলেন বাংলাদেশে সফররত ইরাকের উপ-রাষ্ট্রপতি। শর্শিনায় বিশাল সমাবেশ হয়েছিলো। ওখানেই আমি রেডক্রসের নাম বদল করে রেডক্রিসেন্ট করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এই নাম বদলের যৌক্তিকতা সম্পর্কে মাওলানা মান্নান আমাকে যথার্থ ধারণা দিয়েছিলেন। এবার সৌদি থেকে ফিরে ওই দিনই দক্ষিণবঙ্গে রাজনৈতিক সফরে গিয়েছিলাম। লঞ্চে শর্শিনার পাশ দিয়ে যাবার সময় সেই স্মৃতি মনে পড়েছিলো। ফেরার পথে শর্শিনার পীর সাহেবের মাজার জিয়ারত করেছি। সেখানে গিয়ে মনে পড়লো- যার সাথে প্রথম এখানে এসেছিলাম ঢাকায় ফিরে তাঁর কবরও জিয়ারত করতে হবে। এই তো জীবনের পরিণতি!
মাওলানা মান্নানের আরো একটি অবদানের কথা আমি ভুলতে পারি না। সাধারণের মধ্যে  একটি ধারণা ছিল যে, পরিবার পরিকল্পনা একটি ইসলামবিরোধী কাজ। তিনি ইসলামের দৃষ্টিতে এই পরিবার পরিকল্পনার পক্ষে অনেক যুক্তি দেখিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে মানুষকে বুঝিয়েছেন- পরিবার পরিকল্পনা ইসলামের বিরোধী নয়। ধর্মমন্ত্রী হিসেবে তাঁর মতো ওলামায়ের পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য আলেম ওলামা ও মসজিদের ইমামগণ পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে জনগণকে বুঝিয়েছেন। তাতে মানুষ সচেতন হয়েছে। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কেউ সাধারণ মানুষকে বিভ্রান- করতে পারেনি। আর সে কারণেই জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে আমি সফল হয়েছিলাম। এই সাফল্যের জন্য আমি জাতিসংঘ পুরস্কার লাভ করেছি।
মাওলানা মান্নান একবার চাঁদপুরে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে যেতে যেতে তিনি বলেছিলেন- পত্র-পত্রিকা আপনার খবর সঠিকভাবে প্রচার করে না। আমি একটা পত্রিকা প্রকাশ করবো- সেখানে আপনার খবর সঠিকভাবে তুলে ধরবো। জনসভায় দাঁড়িয়েও তিনি পত্রিকা প্রকাশের ঘোষণা দিলেন। সত্যি সত্যি মাওলানা মান্নান তাই করলেন। তিনি প্রকাশ করলেন দৈনিক ইনকিলাব। তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য কর্মের মধ্যে ইনকিলাব প্রতিষ্ঠাও অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ। তাঁর সুযোগ্য সন-ান এ এম এম বাহাউদ্দীন আজ ইনকিলাবের কর্ণধার, সুদক্ষ সম্পাদক। যোগ্য পিতার যোগ্য সন-ান। পিতার অসমাপ্ত কাজের দায়িত্ব এখন তাঁর। মাদ্রাসা সংগঠনকে তাকেই এগিয়ে নিতে হবে। মাদ্রাসার উপর বারবার আঘাত আসে। দেশে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হলে তখনও মাদ্রাসার উপর ঢালাওভাবে দোষ চাপানো হয়েছিলো। মাওলানা মান্নান শয্যাশায়ী ছিলেন। তিনি প্রতিবাদ করতে পারেননি। আমি সোচ্চার হয়েছিলাম। বলেছি- দরিদ্র মানুষের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার্জনের প্রতিষ্ঠানের উপর ঢালাওভাবে দোষ চাপাবেন না। যারা দু’বেলা ঠিকমতো খেতেও পায় না, মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় যাদের চলতে হয়- তারা কোনো ধরনের সন্ত্রাসের সাথে জড়িত হতে পারে না।
মাওলানা যখন শয্যাশায়ী তখন আমি তাঁকে দেখতে গিয়েছি। কষ্ট পেয়েছি তাঁর শারীরিক অবস'া দেখে। চিকিৎসার জন্য বাহাউদ্দীন তাকে বিদেশেও নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন- দেশের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ওপারের ডাক যদি আসে- কে তারে ধরে রাখতে পারে! আমার দুর্ভাগ্য মাওলানা মান্নানের জানাজা কিংবা কুলখানি কোনোটাতেই শরিক হতে পারিনি বিদেশে ছিলাম বলে। তাঁর কবর জিয়ারত করতে গিয়ে আরো কতো কথা মনে পড়লো। যতোবার মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছি- প্রত্যেকবার মাওলানা মান্নান আমার সাথে ছিলেন। মাতৃভাষার মতো আরবিতে কথা বলতে পারতেন তিনি। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সাথে সাক্ষাতের সময় মাওলানা মান্নান দো-ভাষীর কাজ করতেন। আমার কথা আরবিতে ভাষান-র করে দিতেন। গভীর সম্পর্ক ছিলো তাঁর সাদ্দাম হোসেনের সাথে। আজ যদি সাদ্দাম হোসেন মুক্ত থাকতেন তাহলে মাওলানা মান্নানের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি অবশ্যই বাংলাদেশে আসতেন বলে আমার বিশ্বাস। চিরতরে হারিয়ে গেলেন মাওলানা মান্নানের মতো একজন আলেম। তাঁর মতো ইসলাম-দরদি মানুষের অভাব এদেশে আর পূরণ হবে কিনা জানি না। এভাবেই একদিন চলে যেতে হবে সবাইকে। আমিও থাকবো না। তবে যতোদিন বেঁচে আছি, ততোদিন ইসলামের সেবায় মাওলানা মান্নানের অমর অবদান আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে।

 


created by CreativeIT lTD.